ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: জেলার সমস্ত নদ নদী থেকে বালি উত্তোলনের কাজ বন্ধ ছিল বর্ষার সময়ে। তবে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে নির্মাণের কাজ চালিয়ে যেতে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয় তার জন্য বর্ষাকালীন নদী ঘাট বন্ধের বেশ কিছু দিন আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈধ বালি খাদান গুলোকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট পরিমাণ বালি মজুদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু এবছর ২৫জুন সরকারি নির্দেশে জেলার সমস্ত বালিঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের জেলাজুড়ে একাধিক অভিযানে বালি মজুদের পরিমাণ ও স্থান নিয়ে বিস্তর ফারাক সামনে আসে। আর এরপরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সরকারিভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয় অবৈধ মজুদ বালি। জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই মরশুমে এই সংক্রান্ত বিষয়ে জেলার ৭০টির মতো ঘটনায় এফআইআরও করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গলসি-১ ও ২, আউশগ্রাম-১ ও ২, বর্ধমান-১ ও ২, রায়না-১ ও ২, খণ্ডঘোষ, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম-১ এবং কাটোয়া-১ ব্লকের মোট ৭৩টি স্টক পয়েন্টে বাজেয়াপ্ত করা বালি মজুদ রয়েছে। আর এই ৭৩টি স্টক পয়েন্টে মোট ৪ কোটি ২৮ লক্ষ ১৭ হাজার ৬২৭ ঘনফুট বালি রয়েছে। এই পরিমাণ বালির সবটাই ই-অকশন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার জন্য মোট সংরক্ষিত মূল্য রাখা হয়েছে ৩০ কোটি ৭৬ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৪৪ টাকা। জেলা প্রশাসনের অনুমান, ই-অকশন করে সংরক্ষিত মূল্যের অনেক বেশি আয় করা সম্ভব হবে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি) ইউনিস রিসিন ইসমাইল বলেন, ” সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে অনেকেই বালি মজুদ করেছে। সেই সমস্ত লিজ হোল্ডার ও অবৈধ মজুদকারির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই অবৈধ বালির নিলাম করে ভাল আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবছর। সাধারণত বর্ষাকালীন সময়ে বেআইনিভাবে মজুদ করা বালি বাজেয়াপ্ত করে প্রশাসন। আবার অনুমতির অতিরিক্ত বালিও বাজেয়াপ্ত করা হয়। এবার সেই বাজেয়াপ্ত করা বালির নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে নিলামের জন্য নথি জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ২২ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে ২৩ নভেম্বর সকাল ১০টা পর্যন্ত ওই বালির ই-অকশন বা নিলাম হবে জেলার সদর দপ্তর থেকে।”
জেলা ভূমি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি বালি কারবারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৩ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬৭ হাজার ৮০০ টাকা আদায় হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে বালি খাদান নিলাম করে ৬ কোটি ৫৮ লক্ষ ১৫ হাজার ১৩ টাকা আদায় হয়েছে। রয়্যালটি, সেস বাবদ আদায় হয়েছে ৫৯ কোটি ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৪৯ টাকা। পাশাপাশি ভূমি রাজস্ব খাতে ৫৫ লক্ষ ১৭ হাজার ৮২৭ টাকা এবং বিবিধ খাতে ৪ কোটি ২৯ লক্ষ ১২ হাজার ৮৮৪ টাকা আদায় করা হয়েছে। এবার বাজেয়াপ্ত করা বালি নিলাম করে ৩০ কোটি টাকার বেশি আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এই বছর।
উল্লেখ্য চলতি বছরের ২৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষাকালীন নদ নদী থেকে বালি তোলার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। যদিও এখনও সরকারিভাবে বালি তোলার আজ শুরুর কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ১১১ জন ইজারাদারকে বালি মজুত করার জন্য জেলা প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছিল। প্রতিটি ব্লকের তিন সদস্যর একটি কমিটি তৈরি করা হয় এই বিষয়ে নজরদারি চালানোর জন্য। এই কমিটিতে ছিলেন বিডিও, ব্লক ভূমি আধিকারিক ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বা আইসি। এই কমিটিই অভিযান চালিয়ে বালির মজুদের পরিমাণ ঠিক রয়েছে কি না খতিয়ে দেখে অনেক জায়গায় গরমিল পান। আর তারপরই সরকারিভাবে সেই বালি বাজেয়াপ্ত করা হয়। কেউ আবার অনুমতি ছাড়াই বালি মজুদ করেছিলেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।