গলসিতে দামোদরে হটাৎ দেখা মিলল ডলফিনের, ছবি ক্যামেরাবন্দি হতেই ভাইরাল

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: পুজোর আগে বেশ কিছুদিন ধরে কাটোয়া থেকে পূর্বস্থলী এলাকায় ভাগীরথী তে কুমিরাতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। ভাগীরথীর জলে মাঝে মধ্যেই দেখা মিলছিল কুমিরের। সেই আতঙ্ক এখন কেটেছে। তবে এবার আতঙ্ক না থাকলেও বিস্ময় তৈরি হয়েছে দামোদরের জলে ডলফিনের দেখা মেলায়। গলসি থানার শিল্লা ঘাটের দামোদরের জলে দেখা পাওয়া গেল গাঙ্গেও ডলফিনের ( Platanista gangetica gangetica )। তবে দামোদরে গাঙ্গেও ডলফিন বা শুশুক কে এর আগেও দেখা পাওয়া গিয়েছিল বলে বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এর আগে ২০০২ সালে পারাজ এলাকার শিল্লায় ও ২০২০ সালে গলসি ১ ব্লকের রনডিয়া এলাকায় দেখা মিলেছিল শুশুক বা গ্যাঞ্জেটিক ডলফিনের। জানা গেছে, শুশুক বা গ্যাঞ্জেটিক ডলফিন কে সাধারণত দেখা পাওয়া যায় গঙ্গায় বা ভাগীরথীতে।

বিজ্ঞাপন

এদিন সকালের দিকে দামোদর নদে বালি খাদানে কাজ করার সময় কিছু লোক প্রথম লক্ষ্য করেন নদের মাঝ বরাবর কালো বিরাট বড় একটা কিছু জল থেকে ঝাঁপ দিয়ে উঠে আবার জলে ঢুকে যায়। তারাই মোবাইল ফোনে ডলফিনটিকে ক্যামেরা বন্দি করেন। আর এরপরই দামোদরের জলে ডলফিনের আগমন সম্পর্কে জানতে পারা যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় বেশ কিছু মানুষ নদীর ধারে চলে আসেন। তারাও ডলফিনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন। একটি ছোট্ট ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে ডলফিন টি নিজের স্বভাবমতো জলে খেলা করছে। তবে সকালের দিকে দেখতে পাওয়ার পর ফের ডলফিন টিকে দেখার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় উৎসুক গ্রামবাসীদের।

স্থানীয় বাসিন্দা শুকদেব মাঝি বলেন, ‘দামোদরে এখন জল একটু বেড়েছে। মাঝ নদীতে ভালই জল রয়েছে। সকালের দিকে হঠাই দেখি বিরাট মাছের মতন কিছু একটা জল থেকে হুশ করে উঠে আবারও জলে ডুবে গেল। কৌতূহল তৈরি হওয়ায় আবার দেখার জন্য বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। পরে বেলার দিকে কিছু লোকও জড়ো হলো। অনেকেই মোবাইল ফোন বের করে ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেকেই ডলফিনের ছবি ক্যামেরা বন্দী করেছেন।’

অন্যদিকে তারই মধ্যে ডলফিন দেখতে পাওয়ার খবর পৌঁছে যায় গলসি থানায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি সম্পর্কে গলসি থানার পক্ষ থেকেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। দামোদর এলাকার পাশে থাকা মাঝি ও অন্য পেশার মানুষদের সর্তক করেছে পুলিশ। বন দপ্তরের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। পাশাপাশিই ইতিমধ্যেই প্রায় বিলুপ্ত হতে বসা এই জলজ প্রাণীটিকে কেউ কোনভাবে যাতে বিরক্ত করতে না পারে তারজন্য কড়া নজরদারিও চালাচ্ছে বনবিভাগ। কোনভাবেই যাতে এই শুশুক বা গ্যাঞ্জেটিক ডলফিনের ক্ষতি না হয় সেটিও দেখার অনুরোধ করা হয়েছে।

জেলা বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘সাধারণত দামোদরে এই গাঙ্গেও ডলফিনের  আসার কথা নয়। শুশুক বা গ্যাঞ্জেটিক ডলফিনের দেখা পাওয়া যায় মুলত ভাগীরথী বা গঙ্গায়। তবে কখন কখন এরা বড় নদী থেকে মিষ্টি জলের শাখা নদী গুলোতে চলে আসে। এই ডলফিনটির ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনই কিছু হয়েছে। আমরা স্থানীয়ভাবে ও পুলিশের কাছ থেকে সবার আগে লোকেশনটা নিশ্চিত করার কাজটা করব। তারপরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল কল্যান দাস বলেন, ‘পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে দামোদরে ডলফিন দেখতে পাওয়ার খবর আমাদের কাছেও এসেছে। দামোদরে এখন প্রচুর জল আছে। এই জন্য অন্য বড় নদী থেকে সহজে চলে আসতে পেরেছে এখানে। তাই জলের অভাবে প্রাণীটির কোন ক্ষতি হবে না। তবে নজরদারি অবশ্যই রাখা হবে। ওই এলাকায় আমাদের দপ্তরের লোক রয়েছে।  দামোদরে শুশুক বা গ্যাঞ্জেটিক ডলফিনের দেখা পাওয়া নতুন নয়। এর আগেও দু-তিনবার দামোদরের এই এলকে এই জলজ প্রাণীটির দেখা পাওয়া গিয়েছিল। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।’

আরো পড়ুন