একের পর এক সিলিন্ডার ব্লাস্ট, জতুগৃহ বর্ধমান! রমরমিয়ে বেআইনিভাবে চলছে গ্যাস কাটিংয়ের ব্যবসা, নির্বিকার প্রশাসন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: চায়ের দোকানের আড়ালে অবৈধভাবে চলছিল ডোমেস্টিক গ্যাসের কালোবাজারি। আর সেই গ্যাসের দোকানেই একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার ব্যাপক আতঙ্ক ছড়াল বর্ধমান পুরসভার ১৪নম্বর ওয়ার্ডের বড়নীলপুর বাজারে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলের দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।  দুর্ঘটনায় এক মহিলা সহ দোকান মালিক শুকুর মল্লিক জখম হয়। গুরুতর জখম মহিলার নাম ফাল্গুনী বেগম। তাকে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। অপর দিকে দোকান মালিক শুকুর মল্লিক কে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গিয়েছে, বাজারের মধ্যে স্থানীয় একটি ক্লাবের নিচেই ছিল এই দোকান। দোকানের সামনে ছিল চায়ের ব্যবসা। এরই পিছনদিকে চলত বড় গ্যাসের সিলিণ্ডার থেকে ছোটো সিলিণ্ডারে রিফিলিং (কাটিং) করার কাজ। এছাড়াও ওই দোকানে গ্যাস ওভেন সরানোরও কাজ করা হতো। এমনকি দোকানের ভিতরে অনেক সিলিন্ডারও মজুত ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে বাজারের মধ্যে দিনের বেলায় এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও আগুন লাগার ঘটনায় রীতিমত আলোড়ন ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দোকান ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। আতংকে বাজারে আসা বহু মানুষ ছোটাছুটি শুরু করে দেন।

পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বর্ধমান থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, জনবহুল এলাকার মধ্যে ওই দোকানে গ্যাস মজুত রেখে বড় সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিলিং করা হচ্ছিল। যা সম্পূর্ন বেআইনি। কিভাবে লাইসেন্স ছাড়াই গ্যাসের কারবার চলছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেভাবে গ্যাস সিলিন্ডার গুলিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে তাতে ঘটনা আরো ভয়াবহ হতে পারতো। সেখানে কতগুলি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করা ছিল, এভাবে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করার কোন বৈধ অনুমোদন ছিল কিনা সেসবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এও দেখা গেছে, অতিদাহ্য পদার্থ অর্থাৎ গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ রেখে ব্যবসা করলেও সেখানে অগ্নি নির্বাপক কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। ফলে কিভাবে এই ব্যবসা চলছিল তার তদন্ত শুরু হয়েছে।

এদিকে বর্ধমান পুরসভার বহু জায়গায় বছরের পর বছর ধরে এই গ্যাস রিফিলিংয়ের (কাটিং) কারবার অবৈধভাবে চলতে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়না বলেই অভিযোগ করেছেন খোদ শহরবাসীর একাংশ। অনেকেরই অভিযোগ, পুর প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের গাফিলতি ও নজরদারির অভাবেই এক শ্রেণীর কারবারি দিনের পর দিন শহরের জনবহুল এলাকায় এই বিপজ্জনক কারবার ফেঁদে মুনাফা কামিয়ে আসছে। অভিযোগ এদের কারুরই ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যবসা করার বৈধ অনুমোদনই নেই। আর এই ব্যাপারেও নির্বিকার পুরসভা। যার জন্য যেকোন সময় বড়সড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। ফলে কার্যত জতুগৃহে পরিণত হয়ে উঠছে শহর বর্ধমান বলেই অভিযোগ।

বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার বলেন,’ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সম্পূর্ন রিপোর্ট নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বোর্ডে আলোচনা করে এই ধরনের ব্যবসায়ীদের চিনহিত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। পুর আইন মোতাবেক পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে জেলা দুর্নীতি দমন শাখার ( district enforcement branch) আধিকারিক জুলফিকার আলী বলেন,’ আমরা সারাবছর বেআইনি কারবারের বিরুদ্ধে অভিযান জারি রাখি। সেক্ষেত্রে যেকোন জায়গা থেকে অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। অবৈধ মজুদ যেমন বাজেয়াপ্ত করা হয়, পাশাপাশি বেআইনি কারবারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনারও তদন্ত হবে। শহরে কোথায় কোথায় গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করে বেআইনিভাবে ব্যবসা চলেছে তার বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।’ জেলা পুলিশের আধিকারিক রাকেশ কুমার চৌধুরী বলেন,’ পুলিশ ক্ষতিগ্রস্থ দোকানটি সিল করে দিয়েছে। তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে সুয়ো মোটো মামলা রুজু করা হবে।’

আরো পড়ুন