ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বিনা চালানের কিংবা ওভারলোড বালির গাড়ি থেকে বেআইনি ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে ফুলে ফেঁপে উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ থানা এলাকার বেশ কয়েকজন যুবক বলে স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ ছিলই। এবার সামনে এলো সেই তোলাবাজ সিন্ডিকেটের এক পান্ডার কীর্তিকলাপ। প্রশাসনের নজরদারির মধ্যেই বালির গাড়ি থেকে অবৈধভাবে আদায় করা বেহিসাবী লক্ষ লক্ষ টাকা বর্ধমান শহরের এক পানশালায় উড়িয়ে ফুর্তি করছে সেই পান্ডা বলে সূত্র মারফত খবর। এমনকি ওই ব্যক্তি নিজেও স্বশরীরে পানশালায় প্রায়ই হাজির হলেও মুখে মাস্ক পরে নিজের গোপনীয়তা লোকানোর চেষ্টা করে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে।
সূত্র মারফত আরো জানা গেছে, খন্ডঘোষ এলাকার বালির গাড়ি থেকে তোলাবাজির টাকায় ফুলে ফেঁপে ওঠা ওই ব্যক্তি পানশালায় না এলেও পছন্দের নর্তকীদের নাচ দেখতে পানশালার ফ্লোরের কর্মরত কর্মীদের ফোনে টাকা পাঠিয়ে নর্তকীদের নাচের ভিডিও দেখে অন্যত্র মদের আসরে বসে মস্তি লুটছে বলেই সূত্র মারফত তথ্যে উঠে এসেছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কিভাবে পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির মধ্যেই খন্ডঘোষ এলাকায় দিনের পর দিন বালির গাড়ি থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তুলে যাচ্ছে একটা সিন্ডিকেট! স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, খোদ পুলিশ প্রশাসনের একাংশের মদতেই এই অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছে এই সিন্ডিকেটের মাফিয়ারা। এমনকি বালি ঘাট মালিকদের একাংশও নিজেদের অধিক মুনাফা লাভের আশায় এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে লোডারদের কাছ থেকে সরাসরি গাড়ির নম্বর এবং নির্দিষ্ট টাকা (৩৫০০টাকা) এই সিন্ডিকেটের লোকেদের ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
রাতে রাস্তায় পুলিশ যখন পণ্যবাহী ও বালির গাড়ির বৈধতা চেকিং করছে তখন সেই সমস্ত এন্ট্রি হওয়া গাড়ির নম্বর মিলিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে বলে স্থানীয় অনেকের অভিযোগ। বরং গাড়ির নম্বর যদি এন্ট্রি না থাকে অর্থাৎ পুলিশের কাছে কোন গাড়ির নম্বর যদি এসে না পৌঁছায় তাহলে সেই গাড়ি আটক করছে পুলিশ। সূত্রের খবর, ‘ সেটিং ‘ না থাকলে সেই বালির গাড়ি আটক করে ভূমি রাজস্ব দপ্তরের হাতে তুলে দিচ্ছে পুলিশ। প্রয়োজনে বালির সঠিক চালান কিংবা বালির পরিমাণ ঠিক না থাকলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে চালককেও। যদিও বেআইনিভাবে বালি পরিবহনের জন্য সম্প্রতি বেশ কিছু বালির গাড়ি আটক করেছে খন্ডঘোষ থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারও হয়েছে একাধিক গাড়ির চালকও।
এরপরেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, চারশো বালির গাড়ি চলে যাচ্ছে অনায়াসে বিনা চালান কিংবা ওভারলোড নিয়ে, আর আলেকালে চারটে বালির গাড়ি ধরে পুলিশ বিশাল কাজ করছে বলে দেখানোর চেষ্টা করছে মাত্র। এদিকে প্রায় প্রতিদিন বালির গাড়ি পাসিং এর এই সিন্ডিকেটের লোকেরা গাড়িওয়ালা দের কাছ থেকে লুটে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই ‘ ক্ষতি ‘ পোষাতে বেড়ে যাচ্ছে বালির দামও। ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব।
এলাকাবাসীদের একাংশ রীতিমত প্রশ্ন তুলেছেন, এতো টাকা যাচ্ছে কোথায়? কাদের পকেটে ঢুকছে এই টাকার বখরা? জেলা ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরাই বা কেন এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন? উল্টে এক শ্রেণীর মাফিয়ারা বালির গাড়ি থেকে বেআইনি ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নিজেরা বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠছে। সূত্রের খবর, এক রাতে পানশালায় ফুর্তি করতেই এই বালি সিন্ডিকেটের এক পান্ডা কয়েক লক্ষ টাকা উড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন বলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে । প্রশ্ন উঠেছে, কিভাবে, কাদের মদতে চলছে এই সিন্ডিকেট? এমনও শোনা যাচ্ছে, নিজের কুকীর্তির কথা জানাজানি হয়ে গেছে বুঝে ইদানিং খন্ডঘোষ এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে ওই সিন্ডিকেটের পান্ডা।
ক্রমশ…