ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,খন্ডঘোষ: দামোদর নদে অবৈধ বালি খাদান বন্ধে গত সপ্তাহেই কড়া নির্দেশ জারি করেছে হাইকোর্ট। রাজ্যকে অবৈধ বালি খাদান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। এরই পাশাপাশি ৩ মাসের মধ্যে রাজ্যকে এব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, শুধু FIR করে বসে থাকলে হবে না, অবৈধভাবে বালি তোলা বন্ধ করতে হবে। বেআইনি বালির গাড়ি, বালি তোলার মেশিন বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি জরিমানা করারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু তারপরেও পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষ ব্লকের কামালপুর এলাকায় দামোদর নদে জেসিবি মেশিন নামিয়ে চলছে দেদার বালি লুঠ। বালি চুরি করে শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক্টরের মাধ্যমে পাচার করছে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী বলে অভিযোগ। খন্ডঘোষ থানার পুলিশ ও ব্লক ভূমি দপ্তরের কাছে এই বেআইনি বালি খাদের বিষয়ে খবর থাকলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ।
অভিযোগ, এই কামালপুর এলাকার দামোদর নদ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক্টর বালি চুরি করে স্থানীয় মাফিয়ারা পাচার করে দিচ্ছে। নদীর যে অংশ থেকে বালি কেটে পাচার করা হচ্ছে সেই জায়গার সরকারি কোনো অনুমোদনই নেই। ফলে এই অবৈধ বালি কারবারিদের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের অশুভ যোগসাজশ রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই।
যদিও খন্ডঘোষ ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, নদীর যে অংশে মেশিন নামানো আছে সেই জায়গা খন্ডঘোষ ব্লকের আওতায় পড়ে না। ওই জায়গা বর্ধমান ১ব্লকের ইদিলপুর মৌজার মধ্যে পড়ছে। এছাড়াও বেআইনি ভাবে বালি চুরির খবর পেয়ে অভিযানে গেলে অবৈধ বালি কারবারিরা ট্রাক্টর গুলোকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে দিচ্ছে। ফলে অভিযানে গেলেও অনেকসময় বেআইনি কারবারিদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আমরা রেগুলার অভিযান চালাচ্ছি, বেআইনি বালির গাড়ি ধরা হচ্ছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। বালি চুরির কোন অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ নেওয়া হয় দপ্তরের পক্ষ থেকে। তবে আসন্ন নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য নজরদারিতে কিছু খামতি থাকছে। অভিযান অব্যাহত আছে।’
অন্যদিকে বর্ধমান ১ব্লক ভূমি আধিকারিক বিশ্বজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, বেআইনি বালি খাদানের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। ইদিলপুর মৌজা থেকে যদি মেশিন নামিয়ে বালি চুরির করার কোন অভিযোগ থাকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এদিকে সকাল থেকে রাত, রাত থেকে সকাল কামালপুর এলাকা দিয়ে কয়েকশো ট্রাক্টর বালি নিয়ে যাতায়াত করার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কার্যত অতিষ্ট হয়ে উঠেছে বলেই অভিযোগ করছেন এলাকার বহু মানুষ।
এলাকার কিছু বালি মাফিয়া এই বেআইনি বালির কারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছেন এলাকায় বসবাসকারী অনেকেই। এলাকাবাসীদের একাংশের অভিযোগ, দিনের পর দিন বেআইনি ভাবে নদী থেকে বালি চুরি করে কিছু ব্যক্তি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে, কিন্তু পুলিশ বা প্রশাসনকে এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছেনা। ফলে এই বেআইনি বালি খাদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ কয়েকমাস আগেও এই অবৈধ বালি খাদ থেকে বেলচা দিয়ে বালি তুলে ট্রাক্টরের লোড করা হচ্ছিল, কিন্তু গত দু মাস ধরে সরাসরি নদীতে জেসিবি মেশিন নামিয়ে বালি তুলে শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক্টর ভর্তি করে পাচার চলছে। দেখবার কেউ নেই। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমানের ইদিলপুর ও খন্ডঘোষের কামালপুর এলাকায় কোন বৈধ বালি খাদান নেই। স্বাভাবিকভাবেই এলাকাবাসীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, এরপরও কি ভাবে নদীর যেখান সেখান থেকে দেদার বালি লুঠ চলছে? কাদের মদতে এই বেআইনি কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে? সরকারি সম্পদ লুঠ করে রাজস্বের যারা ক্ষতি করছে পুলিশ বা প্রশাসন কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করছে না? কিভাবে মাসের পর মাস বেআইনি এই বালি চুরি করে পার পেয়ে যাচ্ছে মাফিয়ারা? এইসব প্রশ্নই এখন এলাকায় ঘুরপাক খাচ্ছে।