ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, পশ্চিম বর্ধমান: বর্ষাকালীন নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধের প্রশাসনিক নির্দেশ এখনও ওঠেনি। এরই মধ্যে নদীর জল কমে যাওয়ায় বেপরোয়া বালি মাফিয়াদের একাংশ নদী থেকে দেদার বালি লুট করে পাচার করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। আর এই বালির মাফিয়ারাজ চলছে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা থানার বনকাটি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত অজয় নদের বিভিন্ন জায়গায়।
এমনকি নদী থেকে শ’য়ে শ’য়ে বালি ভর্তি ট্রাক প্রতিদিন গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ফলে রাস্তা সাধারণ মানুষের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে লাগাতার ভারি বালি ভর্তি গাড়ি চলাচলের ফলে রাস্তার ধারে থাকা একাধিক বসত বাড়ির দেওয়ালে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে স্থানীয় কিছু বালি মাফিয়ারা বেআইনি ভাবে দিনের পর দিন নদী থেকে বালি চুরি করে পাচার করে চললেও কারো কোন হেলদোলই নেই বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
এমনকি গ্রামবাসীরা এই অবৈধ কারবার বন্ধ করার জন্য প্রতিবাদ করলে মাফিয়াদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও অভিযোগ। অভিযোগ বনকাটি পঞ্চায়েতের পেয়ারাবাগান ঘাট, শ্মশান ঘাট এলাকা থেকে প্রতিদিন নদী বক্ষে বেআইনিভাবে মেশিন নামিয়ে বালি তুলে কয়েকশো ট্রাক্টরে বালি লোড করে পাচার করে দিচ্ছে বালি মাফিয়ারা। অন্যদিকে এই পঞ্চায়েতেরই বসুদা গ্রামে নদী থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে পুকুর খননের অজুহাতে পুকুর থেকে বিপুল পরিমাণে বালি তুলেও পাচার হয়ে যাচ্ছে বালি বলেও অভিযোগ। অভিযোগ, স্থানীয় কাঁকসা থানাকে বারবার এই বালি চুরির বিষয়ে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও অদৃশ্য কারণে বেআইনি এই বালির কারবার বন্ধ হচ্ছে না। ধরাও পড়ছে না এই অবৈধ বালি কারবারিরা।
গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, খোদ পুলিশ ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের একাংশের সঙ্গে ‘ সেটিং ‘ করেই বালি মাফিয়ারা এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বনকাটি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ও বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীরা এই অবৈধ বালি কারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় বিজেপি নেতা ইন্দ্রজিৎ ঢালী অভিযোগ করেছেন। যদিও কাঁকসা থানার পুলিশের দাবি, বসুুদা গ্রামে সরকারি ভাবে পুকুর খননের কাজ চলছে। এখানে কেউ অবৈধ ভাবে বালি তুলছে না। এছাড়াও বনকাটি পঞ্চায়েত এলাকায় এই মুহূর্তে সমস্ত বালিঘাট বন্ধ রয়েছে। বেআইনি বালির গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়ারাবাগান, শ্মশান ঘাট এলাকায় নদী থেকে বালি চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অষ্টম পাথর, ১১মাইলের বাসিন্দা মিলন অধিকারী, নারায়ণ মেটে ও অজয় কোলে। যদিও সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলাশাসক এর নির্দেশে বালি চুরি রোধে অভিযানে নেমে কয়েকটি বালির গাড়ি আটক করা হয়। একটি বালির গাড়ির আড়াই লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। এমনকি পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার এই বালি চুরি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবুও বেপরোয়া বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য কমেনি। কয়েকদিন বালি চুরি বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়ে গেছে নদীতে মেশিন নামিয়ে বালি তোলার কাজ। সকালের দিকে জঙ্গলের মধ্যে মেশিন লুকিয়ে রেখে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে নদী থেকে বালি লুট।
এমনকি বনকাটি পঞ্চায়েতের কেটলিপুকুর, কাঁটাবেড়া এলাকায় যে একটি বৈধ বালি ঘাট রয়েছে (জঙ্গল খাদান) সেখান থেকেও বর্ষাকালীন সরকারি নির্দেশ অমান্য করে নদী থেকে বালি তুলে রাতের অন্ধকারে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের একাংশের। আর এই বিপুল পরিমাণে বালির গাড়ি যাতায়াতের ফলে সাতকাহনিয়া গ্রামের ভিতর দিয়ে অযোধ্যা হাই স্কুল পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তার হাল বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। প্রশাসন অবিলম্বে এই বেআইনি বালির কারবার বন্ধ না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছেন সাতকাহনিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের বৃহৎ অংশ।