ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, গলসি: রাতের মধ্যেই ১০ ট্রিপ মারতে হবে। প্রতি ট্রিপে ৬০০ টাকা! সকাল হয়ে গেলেই আবার কারবার বন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কাঁচা টাকার লোভ সামলানো মুসকিলই। ফলে যা ঘটার তাই ঘটছে হামেশাই। গলসি থানার গোহগ্রাম পঞ্চায়েতের দামোদর নদ জুড়ে বেআইনি ভাবে চলছে দেদার বালি লুট। সন্ধ্যার পর থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত রাতভর চলছে নদী থেকে বালি চুরি। কে, কতো তাড়াতাড়ি এক ট্রাক্টর বালি ফেলে দিয়ে এসে ফের আবার পরের ট্রিপ লোড করতে পারবে – তারই প্রতিযোগিতা চলছে প্রতিদিন। ফলে গ্রামের রাস্তা গুলো হয়ে উঠেছে বিভীষিকা। বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টরের যাতায়াতে যেকোনো সময় রীতিমত দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকছেন স্থানীয় একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা।

রবিবার সকালে শিকারপুর রোডে, শিকারপুর বাসস্টাড সংলগ্ন ক্যানেল পাড়ে দ্রুতগতিতে যাবার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে জমিতে উল্টে যায় একটি বালির ট্রাক্টর। সেই সময় রাস্তায় লোকজন কম থাকায় বড়ো দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান ট্রাক্টর চালক। কিছুদিন আগে ডালিমগড়ে এক নিরীহ পথচারী এই বালি বোঝাই ট্রাক্টরের বলি হন। সেই ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই, আজ ভোরে ফের দুর্ঘটনার পর কার্যত আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের নজর এড়িয়ে, লোকেশন কে হাতিয়ার করে রাতের অন্ধকারে শয়ে শয়ে ট্রাক্টর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোহগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তায়। পুলিশ ও প্রশাসন কে বারবার জানানো সত্ত্বেও বালি মাফিয়াদের দাপাদাপিতে লাগাম টানা যাচ্ছে না বলেই অভিযোগ। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে খোদ পুলিশ ও প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়েছে।
অভিযোগ, গলসি জুড়ে একাধিক বেআইনি ওয়েব্রিজ (কাঁটা) তৈরি করে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী নদী থেকে এই বালি চুরিতে মদত যোগাচ্ছে। নদী থেকে ট্রাক্টরে করে বালি তুলে এনে কাঁটায় মজুদ করছে। পরে সেই বালি রাতারাতি লরি ও ডাম্পারে লোড করিয়ে পাচার করে দিচ্ছে। ফলে প্রশাসনের অজান্তেই লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারি রাজস্ব লুট হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ও পাত্রসায়র থানার অন্তর্গত দামোদর নদের একাধিক মৌজা থেকে বালি চুরি চলছে। বাঁকুড়া জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের এব্যাপারে কোন হেলদোল নেই বলেই স্থানীয়দের অভিযোগ।
আরো অভিযোগ, বৈধ বালি খাদান থেকে একবার ই–চালান কেটে বালি লোড করে তাড়াতাড়ি সেই বালি নিকটবর্তী কোনো জায়গায় খালি করে দিয়ে এসে কাঁটা গুলো থেকে ফের বালি লোড করে ওই একই চালান নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কার্যত প্রশাসন কে বোকা বানিয়ে এক শ্রেনীর বালি মাফিয়ারা প্রতিদিন সরকারের লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব লুট করে নিচ্ছে। আর এই কারবার চালাতে গিয়ে একদিকে যেমন স্থানীয় রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তেমনই দুর্ঘটনার আশঙ্কাও দিনদিন বেড়েই চলেছে। অবিলম্বে প্রশাসন এই বালি লুঠ এবং ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য বন্ধ না করতে পারলে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসীরা।