জমিতে নাড়া পড়ানো বন্ধে এবার আসরে নামলো ছাত্রছাত্রীরা, কৃষক বাবা-মা কে পাঠালো চিঠি

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, মেমারি: পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে এবং লাগাতার প্রচার কে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা জমির ধান কাটার পর অবশিষ্টাংশ কে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলার কাজ করেই চলেছে। আর জমির এই নাড়া পোড়ানোর কাজ করতে গিয়ে বারবার দুর্ঘটনার কবলেও পড়ছেন অনেকেই। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থানার অন্তর্গত কলানবগ্রামে এক ৭২ বছর বয়সী চাষীর মৃত্যু হয় জমির নাড়া পোড়াতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে। এই ঘটনার পর মেমারি ১ ব্লক প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও, চাষীরা কিন্তু এখনও সজাগ হয়নি বলেই অভিযোগ। যদিও চাষীদের মধ্যে লাগাতার সচেতনতার প্রচার যেমন সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে, তেমনই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরাও  মাঠে নেমে রীতিমত নাড়া পোড়ানোর কুফল নিয়ে বোঝাচ্ছেন চাষীদের। অভিযোগ এরপরেও পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

বিজ্ঞাপন

এবার চাষীদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে, সর্বোপরি তাদের সচেতন করতে আসরে নামলো খোদ কৃষক পরিবারের স্কুল ছাত্রছাত্রীরা। নাড়া পোড়ানো বন্ধের জন্য তারাই পোস্ট কার্ডে চিঠি লিখলো তাদের বাবা-মা কে। বর্ধমান-২ ব্লকের বড়শুল নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে এই অভিনব উদ্যোগ নিল পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতি। কাব্যশ্রী পাল, উদিতা কর, অনুষ্কা দে, রিয়া কোঁড়া, প্রাণেশ দাস ছাড়াও আরও অনেক ছাত্রছাত্রীরা নাড়া পোড়ানোর জন্য যে বাতাসে দূষণ ছড়াচ্ছে এবং জমির ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে জানিয়ে নাড়া পোড়ানো বন্ধের জন্য তারা তাদের বাবা মায়েদের উদ্দেশ্যে পোষ্টকার্ডে চিঠি লিখে সচেতনতার বার্তা পাঠিয়েছে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে।

একইসঙ্গে তারা বাবা ও মাকে অনুরোধ করছে সকলকে নিয়ে এই বিষয়ে গ্রাম সংসদে আলোচনা করার জন্য। এরই পাশাপাশি ওই কচিকাঁচা রা চিঠিতে লিখেছে, তারা যেনো তাদের এই আবেদন গ্রামের সকলের সঙ্গে আলোচনা করেন। বড়শুল নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির আলি মল্লিক জানান, সম্প্রতি যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কলানবগ্রামের জমিতে ঘটে গেল সে বিষয়ে এলাকার ছাত্রছাত্রীরা অবগত।  নাড়া পোড়ানোর ফলে যে ক্ষতি হয় তার জন্য সচেতনতামূলক বিষয় আলোচনা করা হয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। আর সেই আলোচনা শুনেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতির পক্ষ থেকে সন্দীপন সরকার জানান, ‘আমরা জানি একমাত্র নিজের সন্তানদের কথা বাবা-মায়েরা ফেলতে পারেননা। বড়শুল নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের  ছাত্রছাত্রীদের এই পদক্ষেপে কিছুটা হলেও সচেতন হবেন তাদের কৃষক বাবা মায়েরা। আমরা চিঠিগুলো সংগ্রহ করে পোষ্ট অফিসে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি মাত্র।’ এরপরেও নাড়া পোড়ানো বন্ধ নিয়ে সরকার থেকে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের এই প্রচার আদৌ কি চাষীরা শুনছেন? না কোন বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে সরকারকে? কৃষক ও পরিবেশের স্বার্থে এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

আরো পড়ুন