ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, খণ্ডঘোষ: এক বধূকে পিটিয়ে খুনের পরে, প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে নৃশংসভাবে দেহ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগের প্রায় তিনমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অভিযুক্তরা অধরা। এমনই অভিযোগ করেছেন বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানার গোপালনগর এলাকার বাসিন্দা তথা অভিযোগকারী মির জাকিরুদ্দিন। ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন,” পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার মেটেডাঙার নিত্যানন্দ মিশ্রের সঙ্গে প্রায় কুড়ি বছর আগে বিয়ে হয় বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার গোপালনগরের লক্ষ্মীপ্রিয়া মিশ্রর। বিয়ের পর থেকে ওই বধূর উপরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নির্যাতন করতেন। গত ৬ মে গভীর রাতে বধূকে পিটিয়ে খুন করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্ৰমাণ লোপাটের জন্য ফাঁকা মাঠে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। হটাৎ ভোর রাতে মাঠে আগুন দেখতে পেয়ে গ্রামের লোকজন সেখানে পৌঁছলে, অভিযুক্ত শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে যান। খবর পেয়ে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ গিয়ে অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়।”
মির জাকিরউদ্দিন অভিযোগ করেছেন, গত ৬মে গভীর রাতে এই ঘটনার পর লক্ষ্মীপ্রিয়ার শশুর বাড়ির লোকেরা মৃতের বাপের বাড়ির লোকেদের বারবার হুমকি দেয়। ভয়ে বধূর বাপের বাড়ির লোকেরা প্রথমে কোথাও অভিযোগ জানাননি। পরে, তাঁদের এক পরিচিত প্রথমে জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে ৩০মে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ১জুন বর্ধমান আদালতে মামলা করলে, ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক। বর্ধমান দক্ষিণ মহুকুমার পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, ‘বধূ নির্যাতন, পরিকল্পনা করে খুন ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই আদালতে চার্জশিট পেশ করা হবে।’
অভিযোগকারী মির জাকিরুদ্দিন তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, এই পরিকল্পিত খুনের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন নিত্যানন্দ মিশ্র, বিষ্ণুপদ মিশ্র, অপর্ণা মিশ্র এবং রেনুকা মিশ্র ও সোমা। সকলের বাড়ি মেটেডাঙ্গা, থানা- খণ্ডঘোষ, জেলা- পূর্ব বর্ধমান। উল্লেখিত ব্যাক্তিরা যথাক্রমে মৃত লক্ষ্মীপ্রিয়া মিশ্রের সম্পর্কে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। এবং বাকি দুজন বিবাহিতা ননদ হচ্ছে। বিয়ের পর থেকেই লক্ষ্মীপ্রিয়া মিশ্রের উপর উক্ত ব্যাক্তিরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন চালাতো। লক্ষ্মীপ্রিয়ার বাপের বাড়ির লোকজন বারবার তার শশুর বাড়ির লোকেদের বুঝিয়ে অত্যাচার বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু শশুর বাড়ির লোকজন সে কথায় কর্ণপাত করেননি। মির জাকিরুদ্দীন অভিযোগে জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপ্রিয়ার পরিবারের সঙ্গে তার পরিবারের সুসম্পর্ক থাকায় বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে তিনিও লক্ষ্মীপ্রিয়ার শশুর বাড়ির লোকেদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেইসময় তারা লক্ষ্মীপ্রিয়ার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শশুর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কোনো তিক্ততায় যায়নি।
ঘটনার দিন অর্থাৎ ইং- ০৬/০৫/২০২২ তারিখে গভীর রাতে উক্ত অভিযুক্ত ব্যাক্তিরা একসঙ্গে লক্ষ্মীপ্রিয়া মিশ্র কে পিটিয়ে খুন করে প্রমান লোপাটের উদ্দেশ্যে সূর্য ওঠার আগেই ফাঁকা মাঠে দেহ পুড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করে অভিযুক্তরা। হিন্দু ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী মৃতদেহ শ্মশানে দাহ করলে জানাজানি হতে পারে – এই ভয়ে প্রমান লোপাটের উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত শশুরবাড়ির লোকেরা ফাঁকা মাঠে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেয়। গভীর রাত্রে আগুনের শিখা দেখে গ্রামের লোকেরা ছুটে এলে অভিযুক্তরা মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যায়। খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ ঘটনার কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আধপোড়া অবস্থায় মৃতদেহটি উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠিয়ে দেয়।
এর পর থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা লক্ষ্মীপ্রিয়ার ভাই ও অন্যান্যদের উপর প্রবল চাপ দিতে থাকে যাতে কোনো অভিযোগ না করা হয়। এমনকি অভিযোগ জানালে খুন করে দেবার হুমকিও দেওয়া হয় অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে। ফলে লাগাতার হুমকির ভয়ে লক্ষ্মীপ্রিয়ার পরিবারের লোকজন প্রথমে কোনো অভিযোগ থানায় জানায় নি। কিংবা আদালতে কোনো মামলা দায়ের করেননি। মির জাকিরুদ্দিন জানান, তিনি ভিন্ন ধর্মের মানুষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে তার এবং মৃত লক্ষ্মীপ্রিয়া মিশ্রের বাপের বাড়ীর পরিবারের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক আছে। এবং সেই সম্পর্কের নিরিখে এই অমানবিক, বর্বর, নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সত্য উন্মোচিত্ত করার ইচ্ছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির লক্ষ্যে আমি বাধ্য হয়ে এসপির কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। একই সঙ্গে মৃতা লক্ষ্মীপ্রিয়া মিশ্রের জ্বলন্ত মৃতদেহের ভিডিও ক্লিপিং দাখিল করেছি। যাতে উপযুক্ত তদন্ত করে দোষী ব্যাক্তিরা শাস্তি পায় তার ব্যবস্থা করা হয়।