বাড়ির কাজ আটকে টাকা দাবি তৃণমূল নেতার, অভিযোগ দায়ের মেমারি থানায়, আলোড়ন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: পঞ্চায়েতের অনুমোদন নিয়ে আরো পাঁচ জন যে জায়গায় বাড়ি করে বসবাস করছেন সেই একই জায়গায় বাড়ি করতে গিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতার তোলাবাজির শিকার হলেন এক ব্যক্তি। আর এই ঘটনা সামনে আসতেই রীতিমত আলোড়ন পড়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থানার গোপগন্তার ২গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধাকান্তপুর এলাকায়। ইতিমধ্যেই রাধাকান্তপুরের বাসিন্দা সত্যব্রত ওরফে গৌতম হাজরা মেমারি থানায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা সন্দীপ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে তাঁর বাড়ির কাজ বন্ধ করে দিয়ে হুমকি দেওয়া সহ ১ লক্ষ টাকা দাবি করেছে বলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার সূত্রপাত ২২জুলাই। প্রসঙ্গত ২১ জুলাইয়ের সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্কার করে জানিয়ে দিয়েছিলেন কেউ দলের নামে জোর করে টাকা চাইলে তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করুন। পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আর ঠিক তার পরের দিনই এই ঘটনায় ব্যাপক সোরগোল পড়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। লিখিত অভিযোগে গৌতম হাজরা জানিয়েছেন, নিতাইগৌড় আশ্রমের বিপরীতে তিনি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সন্দীপ প্রামাণিক তাঁকে বাঁড়িতে ডেকে হুমকি দেন। অবৈধভাবে কাজ করছেন বলে দাবি জানিয়ে তার কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দিতে তিনি অস্বীকার করায় বাড়ির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

গৌতম হাজরা বলেন, ‘ বাড়ি তৈরির জন্য আমি পঞ্চায়েতে জমির কাগজ সহ সমস্ত কিছু জমা করেছিলাম। পঞ্চায়েত ইন্সপেকশন করে আমাকে টাকা জমা দেবার নির্দেশ দেয়। সেই মতন টাকা জমা করার পরে আমাকে বাড়ি তৈরীর অনুমতিও দেয় পঞ্চায়েত। সেই মতো কাজও শুরু করি। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতা সন্দীপ প্রামাণিক আমাকে বাড়িতে ডেকে হুমকি দেয়। এক লক্ষ টাকা পার্টি ফান্ডে না দিলে কাজ বন্ধ করে দেবার হুমকি দেয়। আমি টাকা দিতে পারবো না বলায়, পঞ্চায়েত অফিসে ওরই কিছু লোক কে দিয়ে অভিযোগ করিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ওর দাবি আমি নাকি ডোবা বুঝিয়ে বাড়ি তৈরী করছি। এটা বেআইনি। টাকা দিলে কেউ টের পাবে না। না দিলে কাজ বন্ধ করে দেবে। টাকা দিইনি। তাই পঞ্চায়েত কে দিয়ে কাজ বন্ধ করিয়ে দিয়েছে জোর করে।’

গোপগন্তার ২ পঞ্চায়েতের প্রধান অঞ্জনা মালিক কে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এলাকার লোকেরা অভিযোগ করেছে বলে আমরা কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি।’ এদিকে যে জায়গায় বাড়ি তৈরি করা নিয়ে অভিযোগ, সেখানে গিয়ে দেখা গেছে একই দাগ নম্বরে আরও বাড়ি তৈরী হয়েছে। সব গুলির ক্ষেত্রেই পঞ্চায়েতের অনুমতি দিয়েছে। তাহলে গৌতম হাজরার ক্ষেত্রে কাজ কেন বন্ধ হলো? আর যে কেউ অভিযোগ করলেই কি সেই অভিযোগের সঠিক অনুসন্ধান না করেই পঞ্চায়েত কাজ বন্ধ করে দিতে পারে? এইসব প্রশ্ন করতেই প্রধান বলেন, ” পঞ্চায়েত অফিসে এসে কথা বলুন। ফোন আমি এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’

অন্যদিকে অভিযুক্ত সন্দীপ প্রামাণিক বলেন, ‘ এসব মিথ্যা অভিযোগ, আমার নামে বদনাম করার জন্যই এসব করা হয়েছে। কাজ বন্ধ করেছে পঞ্চায়েত। ডোবা বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করার জন্য হয়তো এই অর্ডার দিয়েছে। এর সঙ্গে আমার কোনো বিষয় নেই। আমি কারোও কাছ থেকে টাকা নিয়নি।’ মেমারি ১ব্লকের বিডিও বলেন, ‘ যদি একই দাগ নম্বরে অন্য বাড়ির অনুমোদন পঞ্চায়েত এর আগে দিয়ে থাকে তাহলে এ ক্ষেত্রে কেন অন্যরকম নির্দেশ দেবে পঞ্চায়েত। আগের গুলো যদি বৈধ হয়ে থাকে তাহলে এটা কি করে অবৈধ হবে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, ‘মেমারি থানায় অভিযোগ হওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করে দেখে ২৫ তারিখে ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়া, জোর করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া ও তোলাবাজির ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।      বিএলআরও, পঞ্চায়েত সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকেদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরো পড়ুন