নজিরবিহীন ঘটনা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে, কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি, তুমুল অশান্তি, হস্তক্ষেপ পুলিশের

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, বর্ধমান: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একাধিক সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানোর পরেও কোন সুরাহা না হওয়ায় বুধবার আইন বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের একাংশ ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি ক্যাম্পাসে রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ জানাত  গেলে তুমুল অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যা কোনদিন ঘটেনি তেমনি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যায় এদিন। খোদ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধেই ছাত্রছাত্রী দের হেনস্তার অভিযোগ উঠলো, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও ছাত্র ছাত্রীদের বিরুদ্ধে রেজিষ্টার কে হেনস্থা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে পুলিশ কেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ঢুকে অবস্থা সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হয়। সূত্রের খবর, দু পক্ষের ধস্তাধস্তি, ঠেলাঠেলিতে সেমিস্টার ১এর এক ছাত্র মুন্সী আশরাফুল করিম গুরুতর আহত হয়েছেন। তার বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে নিরেপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। আগামী ১৯ফ্রেব্রুয়ারি দু পক্ষ কে নিয়ে আইনবিভাগের সমস্যা সম্মন্ধীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য গৌতম চন্দ্র।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এদিন আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি প্রদান কে কেন্দ্র করে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, নিরাপত্তাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও তার দফতের সামনে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন আইনবিভাগের একদল পড়ুয়া। পাল্টা রেজিস্টারের দাবী, একদল ছাত্রছাত্রী তার ঘরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পরতে গেলে তিনি দরজা আটকে রাখা সত্ত্বেও বেশকিছু ছাত্রছাত্রী জোর করে তার ঘরে ঢুকতে গেলে তিনিই ধাক্কা খান। সেই সময় নিরাপত্তাকর্মীরাই নিজেদের কর্তব্য পালন করে তাকে রক্ষা করেছে। এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি ক্যাম্পাসে।

প্রসঙ্গত ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার।  আইনবিভাগেরই একদল ছাত্রের বিরুদ্ধে অনান্য ছাত্রছাত্রী এমনকি শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও প্রতি অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলে বিভাগীয় প্রধানকে ঘেরাও করেন পড়ুয়াদের একাংশ।এমনকি লিখিত অভিযোগও জানানো হয় উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্টারকে।অভিযোগ জানানোর পরও কোনো সুরাহা না হওয়ায় বুধবার ফের ছাত্রছাত্রীরা রেজিস্টারের কাছে গেলে অশান্তি বাঁধে। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, স্মারকলিপি দিতে গেলে রেজিস্টার ও নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এমনকি মারধর ও ধাক্কাধাক্কিও করেন।

পাল্টা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সুজিত কুমার চৌধুরীর দাবি, ছাত্রছাত্রীরা দল বেঁধে দরজা ধাক্কা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে তারই ধাক্কা লাগে। নিরাপত্তারক্ষীরা না থাকলে অন্য ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। যদিও ছাত্র-ছাত্রীরা পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্রের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় ও ঘটনার অভিযোগ জানান। উপাচার্য জানান, সমগ্র বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আক্রান্ত ছাত্র মুন্সি আসরাফুল করিম বলেন, ‘আমাদের বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরণের অনৈতিক কাজ হচ্ছে। আমরা এক গুচ্ছ অভিযোগ দিয়েছি রেজিস্টার সহ উপাচার্যর কাছে। কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরেও অত্যাচার হয়েছে। তার ভিডিও রয়েছে আমাদের কাছে। এদিন আমরা পুরানো অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কি ব্যবস্থা নিচ্ছে ও নতুন কিছু সমস্যা নিয়ে রেজিস্টারের কাছে এলে উনি চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আমাকে মারধর করেন, লাথি মারেন। এমনকি মহিলাদের উপরেও ওনার আশ্রিত দুস্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে। আমরা উপাচার্যকে বলেছি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’ রেজিস্টারের ঘরের সামনে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, রেজিস্টার তার চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার পরেই উত্তেজনা ছড়ায় দুপক্ষের মধ্যেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘ ঘটনার সময়ে চেম্বারে ছিলাম না। এসে সবই জানতে পেরেছি। যেটাই হয়ে থাকুক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটা কাঙ্খিত নয়। ১৯ তারিখে আমি সবাই কে নিয়ে আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

আরো পড়ুন