বালি মাফিয়াদের দাপটে গ্রামের রাস্তা প্রায় অবরুদ্ধ, হুঁশ নেই প্রশাসনের, ক্ষোভে ফুঁসছে গ্রামবাসীরা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: হটাৎ দেখে মনে হতেই পারে এ যেন দামোদর নদ থেকে সব বালি তুলে ফেলা হয়েছে। গ্রামের মানুষের যাতায়াতের রাস্তার ধারে সেই বালি পাহাড় সমান উঁচু করে মজুদ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেউ কিছুই জানে না! অভিযোগ, বালি মাফিয়াদের যখন যেমন মনে হয়েছে নদী থেকে বালি তুলে যেখানে সেখানে মজুদ করে রেখেছে। বর্ষাকালীন সরকারি নির্দেশ – ‘নদনদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ ‘ এই নির্দেশ জারি হওয়ার আগে এবং পরেও এই বালি তোলার কাজ চলেছে। কেবলমাত্র প্রচুর মুনাফার আশায়। এখন বিক্রিও হচ্ছে গাড়ি গাড়ি। এখানে বালি যেন সোনা ! অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে নাকি অভিযোগ না থাকলে কেউ কিছুই জানতে পারে না। আর এর দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে শুধুই স্থানীয় এলাকাবাসীদের।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গ্রামের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের মূল রাস্তা কার্যত এই বালির মজুদের কারণে, আর মজুদ বালি সারাদিন ধরে বালি মাফিয়ারা লোড করে সরবরাহ করার কারণে জনজীবন একপ্রকার অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। মানুষের যাতায়াত তো বটেই, এলাকার ছাত্রছাত্রী থেকে নিত্য যাতায়াতকারী মানুষের চলাচল করাই কার্যত দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমনই চিত্র দেখা গেল পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষের শশঙ্গা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায়। পঞ্চায়েত থেকে বিডিও ও বিএলআরও অফিস সর্বত্র এই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও সমস্যার কোন সমাধান হয়নি বলেই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। তাদের একাংশের অভিযোগ, এই সমস্যার কোনোদিন সমাধান হবে না। কারণ বালির অবৈধ কারবারিদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও শাসকদলের একাংশের ‘সেটিং’ রয়েছে। ফলে এই বালি মাফিয়ারা একপ্রকার বেপরোয়া।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, খন্ডঘোষ ব্লকের পাশ দিয়ে বয়ে চলা দামোদর নদীতে রয়েছে বৈধ,অবৈধ শতাধিক বালি ঘাট। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বর্ষাকালে নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ থাকার কারণে বালি মাফিয়ারা আগে থেকে নদী থেকে বালি তুলে নদী সংলগ্ন গ্রামের রাস্তার ধারে পাহাড় প্রমান বালি মজুদ করে রেখেছে। অভিযোগ, অনেকেই এই মজুদ সরকারি নিয়ম কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাস্তার পাশেই করে রেখেছে মোটা টাকায় বিক্রির উদ্দেশ্যে। ফলে প্রত্যেকদিন শয়ে শয়ে বালির গাড়ি আসছে এই বালি নিয়ে যেতে। ট্রাক ও লরির লাইনে গ্রামের রাস্তা গুলি প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে থাকছে। এতে যেমন গ্রামের ছেলে-মেয়েদের স্কুল যেতে অসুবিধা হচ্ছে, তেমনই সরকারি অফিস থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র যাতায়াতে প্রতিদিন চরম সমস্যার মধ্যে পরতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের বলে অভিযোগ।

এদিকে এই সমস্যা নিয়ে শাসকদল ও বিরোধী দু’পক্ষই একে অপরের দিকে আক্রমণ শানাচ্ছে। বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি শ্যামল রায় বলেন,” এই সমস্যা শুধু খন্ডঘোষের নয়, সারা রাজ্যের যেখানেই নদ নদী থেকে বালির কারবার চলে সেখানকার এলকাবাসী কে এই দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এর মূল কারণ বালি মাফিয়া, শাসক দলের মদত, পুলিশ, ও প্রশাসনের একাংশ এই কারবারের সঙ্গে এক মন্ত্রে দীক্ষিত। ফলে সাধারণের অসুবিধার কথা ভাবার কারুর সময় নেই। তবে আমরা ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে প্রশাসন কে অনুরোধ করবো অবিলম্বে এই সমস্যা নিয়ে হস্তক্ষেপ করার। তা নাহলে সাধারণ মানুষকে নিয়ে বিজেপি বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। কারণ সাধারণ মানুষের সাহস নেই বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার।”

অন্যদিকে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,” বিজেপি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করছে। কারণ আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন, অবৈধ বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। সেইমত পুলিশ ও প্রশাসন লাগাতার ব্যবস্থা নিয়ে চলেছে। যদি সত্যি কেউ অবৈধ ভাবে বালি তোলে বা মজুদ করে তার জন্য প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এখানে তৃণমূলের কোনো বিষয় নেই। বালির অবৈধ কারবার দেখার জন্য সরকারি দপ্তর রয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন রয়েছে। ”

যদিও গ্রামবাসীদের অধিকাংশের অভিযোগ, শশঙ্গা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বিস্তীর্ণ জায়গায় এক কথায় বালি মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্যে চলছে। এদের দাপটে সাধারণ মানুষ কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এদিকে সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন এই সমস্যার মধ্যে থাকলেও কার্যত একপ্রকার নির্বিকার প্রশাসন বলেই স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয় এক গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন, বর্ষাকালে রাস্তা দিয়ে হাঁটাই যায় না। এক হাঁটু কাদা থাকে। তার ওপর সারি দিয়ে বালির গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত করা কার্যত দুঃসাধ্য। অসুস্থ কাউকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যেতে হলে ঘুর পথে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। এলাকায় একটা স্কুল আছে, যেখানে তিন কিলোমিটার দূর থেকে ছেলে মেয়েরা পড়তে আসে। বালির গাড়ির কারণে সেটাও বিভীষিকা হয়ে উঠেছে। আর এই সমস্যার জন্য দায়ী শুধুই প্রশাসন। 

আরো পড়ুন