অবশেষে নবনির্মিত সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনে স্থানান্তর হচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী বর্ধমান রাজবাড়ীর মহাতাব মঞ্জিলের অলিন্দ ছেড়ে প্রায় ৬১বছর পর এবার নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর হতে চলেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর। আর চলতি সপ্তাহ থেকেই এই দপ্তর সমূহের স্থানান্তরকরণের কাজ শুরু হতে চলেছে বলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সূত্রে জানতে পারা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ধাপে ধাপে রাজবাড়ীর হেরিটেজ ভবন থেকে সব বিভাগই চলে আসবে বর্ধমানের নার্সিং কোয়ার্টারের সামনে ভাঙা মসজিদ এলাকায় প্রায় ৫ বছর ধরে তৈরী হয়ে পড়ে থাকা ৮তলা গোল্ডেন জুবিলি ভবনে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই গোল্ডেন জুবিলি ভবনে ধাপে ধাপে চলে আসবে ফিনান্স, ডেভেলপমেণ্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরগুলি সহ আরও কয়েকটি দপ্তর যা মহতাব মঞ্জিলে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার বিভাগটি আলাদা নতুন ভবনে রয়েছে এবং তা হেরিটেজ ভবন নয়, তাই ওই দপ্তর সেখানেই থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহতাব মঞ্জিলে যে সমস্ত দপ্তরগুলি রয়েছে সেগুলি সবই স্থানান্তর হবে এই গোল্ডেন জুবিলি ভবনে। যদিও এখনই উপাচার্য ওই ভবনে যেতে পারছেন না। কারণ ভবনের ৬, ৭ ও ৮ তলার ভেতরের অংশের কাজ এখনও বাকি। উপাচার্য থাকবেন ৬ তলায়। ভবনের এই অংশের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় তিনি যেতে পারবেন না। জানা গেছে, মহতাব মঞ্জিল থেকে সমস্ত দপ্তরগুলি চলে যাবার পর এই হেরিটেজ মহতাব মঞ্জিলকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে। শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই এব্যাপারে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছে হেরিটেজ বিভাগ। জানা গেছে, ঐতিহাসিক রাজবাড়ীর এই অংশে তৈরী হবে একটি সংগ্রহশালাও। সেখানে রাজ আমলের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য থাকবে প্রদর্শনীর জন্য।

উল্লেখ্য, বর্ধমানের মহারাজ মহতাব চাঁদের উদ্যোগে কাঞ্চননগর থেকে রাজবাড়ি স্থানান্তর হয়ে চলে আসে বর্ধমান শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রায় ১৮৪০ সাল নাগাদ। ম্যাকিনটস বার্ণ কোম্পানীর হাত ধরে ইতালীয় স্থাপত্যে তৈরী হয় এই রাজবাড়ি। ১৯৫৪ সালে জমিদারী প্রথা বিলোপের পর বর্ধমান মহারাজার এই বসতবাড়ি মহতাব মঞ্জিলকে তুলে দেওয়া হয় সরকারের হাতে। ১৯৬০ সালের ১৫ জানুয়ারী থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসাবে কাজ শুরু হয় এই মহতাব মঞ্জিলে।

এরপর ২০১৩ সালে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এই রাজবাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করে। আর তারপরেই বিকল্প ভবন তৈরীর উদ্যোগ শুরু হয়। তৎকালীন উপাচার্য স্মৃতি কুমার সরকারের আমলে ভাঙা মসজিদ এলাকায় থাকা বিশাল জলাজমিকে ভরাট করে ২৫কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরী শুরু হয় ৮ তলা এই গোল্ডেন জুবিলি ভবন। যা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। বর্ধমান পুরসভার পক্ষ থেকে তৎকালীন পুরপতি প্রয়াত ডা. স্বরূপ দত্ত অভিযোগ তোলেন পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই তৈরী হচ্ছে এই ভবন। যা নিয়ে বিতর্ক অনেকদূর পর্যন্ত গড়ায়। যদিও সেই সমস্ত বিতর্ককে ধামাচাপা দিয়েই ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি উদ্বোধন করেন এই গোল্ডেন জুবিলি ভবনের। যদিও সেই সময় ভবনের ভেতরের অংশের অনেক কাজই অসমাপ্ত ছিল।

এদিকে, গত প্রায় ৫ বছর ধরে নির্মিত হয়ে ভবনটি পড়ে থাকার পর অবশেষে শেষমেষ আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ স্থানান্তর। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তাঁরা আশা করছেন আগামী ১ মাসের মধ্যে মহতাব মঞ্জিলে থাকা দপ্তরগুলি স্থানান্তরের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আরো কিছুদিনের মধ্যে এই ভবনের ৬ থেকে ৮ তলার কাজও শেষ হয়ে যাবার কথা। আর তা শেষ হলেই উপাচার্য্যও চলে আসবেন এই নতুন ভবনে।

আরো পড়ুন