খাগড়াকাণ্ডের পর বর্ধমানে আর্ন্তরাজ্য হেরোইন কারবারের হদিস, জেলা পুলিশ অন্ধকারেই!

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বছর সাতেক আগেই খাগড়াগড় কাণ্ড দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে তোলপাড় ফেলেছিল। আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের জঙ্গী কার্যকলাপের ডেরার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল এই বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়ে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর দুর্গাপূজোর অষ্টমীর দিন দুপুরে যদি বিধ্বংসী বিস্ফোরণ না ঘটত তাহলে কাকপক্ষীতেও টের পেত না – বর্ধমান শহর লাগোয়া ঘিঞ্জি একটি এলাকার দোতলা বাড়িতে আপাত নিরীহ ভাড়াটেরা কি ভয়াবহ খেলায় মেতেছিল। ভাড়া বাড়ির দোতলায় বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল দুজন জঙ্গীর। কার্যত সেই ঘটনায় বিশাল ভারতবর্ষের এককোণায় থাকা বর্ধমান শহর এবং খাগড়াগড়ের নাম কার্যত বিশ্বের সামনে চলে এসেছিল। কিন্তু তার আগে ঘুন্নাক্ষরেও জানতে পারেনি জেলা পুলিশের ইন্টিলিজেন্স টিম। 

বিজ্ঞাপন

তবে এবার কোনো জঙ্গী কার্যকলাপের ঘটনা না ঘটলেও রবিবার রাতে সেই বর্ধমান শহরের একপ্রান্তে শান্ত এক জায়গা থেকে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অভিযানে সামনে চলে এলো আর্ন্তরাজ্য হেরোইন কারবারের ডেরার। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১৩কোটি টাকার হেরোইন, হেরোইন তৈরীর সরঞ্জাম সহ নগদ ২০লক্ষাধিক টাকা। এসটিএফ এর হাতে ধরা পড়েছে মাদক কারবারি বাবাব ছেলে। যে হেরোইন নিয়ে আর্ন্তরাজ্য কারবার চলে তা কিনা এই বর্ধমান শহর থেকেই রপ্তানি হয় -এ ভেবেই শিউড়ে উঠছেন এখন জেলার মানুষ। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলছেন আরও কত কি জানা যাবে কে জানে।

প্রসঙ্গত কলকাতা এবং কলকাতা সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে মাঝে মাঝেই অস্ত্র কারখানার হদিশ পাওয়া যায় পুলিশী হানায়। কিন্তু এতবড় মাদক কারবারের ঘটনা বর্ধমানে বসেই চলছিল কিভাবে দিনের পর দিন – তানিয়েই এবার বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল। কেন জেলা পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনের নজরে এল না এই কারবার – চর্চা শুরু হয়েছে তা নিয়েও। স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭বছর আগে অভিযুক্ত ধৃত এই বাবর মণ্ডল বৈকুণ্ঠপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন গোপালনগর গ্রামের সেচ ক্যানেলের পাড়ে এই বাড়ি তৈরী করেন। মাথায় এ্যাসবেসটসের ছাদ দিয়ে।

অনেকেই জানতেন তাঁদের আর্থিক সামর্থ্য তেমন কিছু নয়। আর সেই আপাত নিরীহ বাড়ি থেকেই চলত আর্ন্তরাজ্য মাদক কারবার – রবিবারের পর অনেকেই রীতিমত ঘাবড়ে গেছেন এই ঘটনা জানার পর। কেন গোপালনগর থেকে এই কারবার চলত – সেই বিষয়ে জানা গেছে, আপাত শান্ত এই জায়গা থেকে এই কারবার চালানোর দুটি সহজ সুবিধা রয়েছে। একটি কাছাকাছি জাতীয় সড়ক এবং দ্বিতীয় কারণ সেচ ক্যানেলের পাড়ে সরকারী জায়গায় বসে এই কারবার চালালে কারও নজরে আসবে না।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এসটিএফের হাতে ধৃত বাবর মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরেই মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। গাঁজা পাচার দিয়ে তিনি মাদকরাজ্যে পা দেন। হাওড়ার গোলাবাড়ি থানায় মাদক সংক্রান্ত একটি কেসের তদন্ত করতে গিয়েই এসটিএফ বর্ধমানের এই কারবারের হদিশ পান। কিন্তু হাতকলমে পাকড়াও করার সুযোগ হচ্ছিল না। জানা গেছে, গত প্রায় ৩ মাস ধরেই এসটিএফ বাবর মণ্ডলের দুটি বাড়ির উপর গোপনে নজর রেখেছিল। আর একদম নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই রবিবার গভীর রাতে এসটিএফ হানা দেয় বাবর মণ্ডলের বাড়িতে।

কিন্তু কেন এতবড় মাদক কারবারের হদিস এতদিন জেলা পুলিশের নজরে এলো না? এব্যাপারে বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিনহা রায় জানিয়েছেন, এই কারবার কতদিন ধরে চলছিল তা নিয়ে এখন তদন্ত চলছে। তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে তাঁরা গোটা বিষয়টির ওপর নজর রেখেছেন। তাঁরা তাঁদের মত করে সমগ্র বিষয়টা খতিয়ে দেখছেন।

আরো পড়ুন