জাল নোট কান্ডের জের, সাতদিনের মধ্যে ভাড়াটেদের তথ্য জমা করতে হবে বর্ধমান থানায়, প্রচার শুরু

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: জঙ্গি বিস্ফোরণ থেকে জাল নোট ও ডলার তৈরির কারখানা – বর্ধমানের খাগড়াগড় ও সংলগ্ন এলাকা যেন নাশকতা আর প্রতারণা চক্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বারবার একের পর এক বুক কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনায় খোদ এই এলাকার বসবাসকারীরাই বেজায় খুদ্ধ। কখনো কাপড়ের ব্যবসায়ী আবার কখনো মানবধিকার কর্মীর পরিচয়ের আড়ালে বাজার মূল্যের থেকে অনেক বেশি টাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুষ্কৃতীরা দিব্যি ডেরা বাঁধছে বর্ধমানের মতো আপাত শান্ত শহরের এই এলাকায়।

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসীদের অভিযোগ ২০১৪ সালে জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামে জঙ্গি সংগঠনের ডেরার হদিস পাওয়ার পর জেলা পুলিশ প্রশাসন থেকে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল বাড়িওয়ালাদের ভাড়াটিয়া সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য বর্ধমান থানায় জমা করতে হবে। অভিযোগ, কেউ শোনেনি সেই নির্দেশ। পুলিশও এব্যাপারে লাগাতার নজরদারি করেনি। আর তারই ফলস্বরূপ ফের এই এলাকা খবরের শিরোনামে চলে এলো। আবিষ্কার হলো বিদেশি নকল কারেন্সি ও দেশি টাকা ছাপার কারখানা। রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ও বর্ধমান থানার পুলিশের তৎপরতায় গ্রেপ্তার হয়েছে তিন কালপ্রিট। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে এই নকল নোট কারবারের পুরো চক্র কে খুঁজে বের করতে জোরদার তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

পাশাপাশি এবার আর কোনো গাফিলতি করতে চাইছে না পুলিশ। সোমবার খাগড়াগড় ও সংলগ্ন এলাকার বাড়ির মালিকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করা হয়েছে আগামী সাতদিনের মধ্যে এই এলাকায় যে সমস্ত বাড়ির মালিকরা ভাড়াটে রেখেছেন বাড়িতে, তাদের আধারকার্ড, ভোটারকার্ড বা যে কোন সরকারি বৈধ কাগজের ফটোকপি সহ থানা থেকে ভাড়াটে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম নিয়ে তা পূরণ করে থানায় জমা দিতে হবে। এই কাজে প্রয়োজনে পুলিশ সহযোগিতাও করবে। যদি সাতদিনের মধ্যে কেউ এই তথ্য জমা না দেয়, সেক্ষেত্রে পরবর্তী দিনে তার বাড়িতে ভাড়াটে থাকলে পুলিশ সেই বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। প্রসঙ্গত এদিন গোটা এলাকায় বর্ধমান থানার পক্ষ থেকে টোটো করে এই নির্দেশিকা মাইকিং করা হয়।

জানা গেছে, খাগড়াগড়, কেষ্টপুর, মাঠপাড়া সহ লাগোয়া এলাকা গুলিতে বর্তমানে কতজন ভাড়াটে রয়েছে তার কোন তথ্যই নেই বর্ধমান থানায়। সিরাজুল ইসলামের বাড়ি ভাড়া নিয়ে নকল নোটের রমরমা কারবারের পরেও পুলিশের হাতে এলাকার কোন বাড়ির মালিক তার ভাড়াটে সম্পর্কে কোন তথ্যই তুলে দেয়নি। যা পুলিশের কাছে ক্রমেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেখানে পুলিশেরই গোয়েন্দা বিভাগের সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে এই এলাকায় প্রায় এক থেকে দেড়শো জন ভাড়াটে রয়েছে। কেন বাড়ির মালিকরা সে তথ্য পুলিশের কাছে গোপন করতে চাইছে এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে বেশি টাকার লোভে কোনো কিছু না দেখে না ভেবেই অনেকে বাড়ি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছে বলে এলাকারই একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন।

জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘খাগড়াগড়ে এমন কোন সুবিধা নেই যা শহরের মধ্যে পাওয়া যায়না। ফলে এমন একটা ঘিঞ্জি, দূরের জায়গায় যখনই কেউ ২-৩ হাজার টাকার ঘর ১৫-২০ হাজার টাকায় ভাড়া নিচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই সে কোন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গেই জড়িয়ে। কারন ওখানে ফোকাসটা অনেক কম আছে প্রশাসনের, সংবাদ মাধ্যমের। কিছু ঘটে গেলে খুব সহজেই রাতের অন্ধকারে দুটো জাতীয় সড়কের মধ্যে কোন একটা রাস্তা দিয়ে সহজেই পালিয়ে যাওয়া সম্ভব। এলাকার লোকেরা যদি সচেতন না হয়, পুলিশের একার পক্ষে এটা সম্ভব হবেনা কখনই।’ জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘আমরা তথ্য চাইছি বারেবারেই। এবারে কেউ তথ্য না দিলে আইন মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটা যারা ভাড়া দিয়েছেন তখন তারা জানতে পারবেন।’

খাগড়াগড়ের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, ‘পুলিশ এর আগেও ভাড়াটিয়াদের তথ্য থানায় জমা করার কথা বলে গিয়েছে। কৈ কেউ তো কাগজ দেয়নি। আমাদের পাড়াতেই ১০-১২ জন ভাড়াটে থাকে বিভিন্ন বাড়িতে। তারা কোথা থেকে এসেছে, কি করে আমরা পাড়ার লোকেরা জানিনা। কারুর সঙ্গেও ওরা মেশে না। আবারও কোন বিপদ হবে। তখন পুলিশ সাংবাদিকদের ঘনঘন যাতায়াত হবে। দিয়ে সব চুপ হয়ে যাবে, মরব আমরা।’ বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন এমন একজনের বাড়িতে গেলে ওই বাড়ির এক মহিলা ভাড়াটের খোঁজ নিতে এসেছি জানতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। নিজের নামও জানাতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘আমার বাড়িতে আমি ভাড়াটে রেখেছি। পুলিশকে কেন জানাতে যাব। পুলিশ কি আমার বাড়ি তৈরী করে দিয়েছিল?’ 

আরো পড়ুন