নিরাপত্তা বাড়াতে সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হচ্ছে বর্ধমানের জহুরী পট্টি

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ফের একবার নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হল বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুর, জহুরী পট্টি এলাকা থেকে বিসি রোড, সিং দরজা সহ বড়বাজার এলাকা কে। বর্ধমান সদর স্বর্ণশিল্প ওয়েলফেয়ার সমিতির উদ্যোগে এই সমস্ত এলাকায় লাগানো হচ্ছে প্রায় ৮০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বরূপ কোণার বলেন,’ বর্ধমান জেলা পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনার পর সমিতির কর্মকর্তা ও সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার কারণে নতুন করে মোট ৮০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৫০টি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে, ধাপে ধাপে প্রয়োজন অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন এলাকার বিশেষ বিশেষ রাস্তার মোড়ে এবং গলিতে আরো ৩০টি ক্যামেরা লাগানো হবে।’ 

বিজ্ঞাপন

স্বরূপ কোণার বলেন, সমস্ত সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ সিস্টেম একটি থাকবে বর্ধমান থানায় ও আরেকটি থাকবে জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে। ফলে এই প্রক্রিয়া শেষ হলে যেকোন ধরনের অপরাধ এবং অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিতকরণ করতে পুলিশের সুবিধাই হবে।’ এরই পাশপাশি শহরের যে সমস্ত রাস্তায় নতুন করে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে সেই সব জনবহুল এলাকার নিরাপত্তাও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলেই মনে করছেন সমিতির সদস্য রা। স্বরূপ কোণার বলেন,’ আগামী ১৫দিনের মধ্যে প্রথম ধাপের কাজ সম্পূর্ন করে দেওয়া হবে। পরবর্তীকালে সামগ্রিক ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ করে পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ হবে।’ 

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে সমিতির পক্ষ থেকে ৩৪টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই সমস্ত ক্যামেরার অনেকগুলোই চুরি হয়ে গেছে। কিছু খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ফলে নিরাপত্তার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। বর্ধমান থানার পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন করে ফের ৮০টি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমিতির একাধিক সদস্য। সমিতির অন্যতম সদস্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী মেহেতাবুদ্দিন জানিয়েছেন, প্রায় সাড়ে ৬লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য। 

বি সি রোডের একটি স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মিঠুন পাল বলেন, ‘ নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়োজন ছিলই। অনেক সময়ই কোনো অপরাধ হয়ে যাবার পর পুলিশ কে সিসি ক্যামেরার ছবি সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হয়। পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা থাকলে সেক্ষেত্রে সমস্যা অনেকটাই কমবে। বর্ধমান সদর স্বর্ণশিল্প ওয়েলফেয়ার সমিতির এই উদ্যোগ যথেষ্ট প্রশংসনীয়। এই ব্যবস্থার ফলে পথ চলতি মানুষ থেকে বিভিন্ন এলাকার বসবাসকারী মানুষের নিরাপত্তা আরো বাড়বে বলেই আশা করি।’ 

অন্যদিকে বর্ধমান থানার আই সি সুখময় চক্রবর্তী বলেন, ‘ পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সংগঠন কে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে। এরপর বর্ধমান সদর স্বর্ণশিল্প ওয়েলফেয়ার সমিতির উদ্যোগে আজ থেকে বেশ কিছু ক্যামেরা লাগানোর কাজ তারা শুরু করেছে। তিনি জানিয়েছেন, এর মধ্যে বিধায়ক কোটার ১৫লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে শহরের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য। পরবর্তীকালে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ন হলে আরো সিসি ক্যামেরা বসানো হবে শহরে।

প্রসঙ্গত বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুর এলাকার জহুরীপট্টি  সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সোনার দোকানে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি সোনার দোকানে ভয়াবহ চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে বর্ধমান থানার পুলিশ মধ্যপ্রদেশ গ্যাং এর হদিস পেয়েছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সেই ঘটনায় পুলিশ মহসিন খান ও আর জয়সয়াল নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল। এছাড়াও বর্ধমানেরই অন্য একটি সোনার দোকানে চুরির ঘটনায় বর্ধমান থানার পুলিশ সিসি ক্যামেরার সূত্র ধরে বিহারের লক্ষ্মীসড়াই গ্যাং এর খোঁজ পেয়েছিল। পাশাপাশি সোনা চুরি কাণ্ডে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে। সেক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশি তদন্তে সাহায্য করেছিল বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।  ফলে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরার নজরদারি থাকলে অপরাধ এবং অপরাধী কে ধরতে পুলিশের যে অনেকটাই সুবিধা হবে তা খোদ পুলিশ সূত্রেই জানা গেছে। 

আরো পড়ুন