বর্ধমানে জমি রেজিস্ট্রী করতে এসে দালালের হাতে প্রহৃত বৃদ্ধ, তীব্র উত্তেজনা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: নিজের জমি নিজেরই ভাইকে বিক্রি করার পর সেই জমিই রেজিস্ট্রী করে দিতে এসে সরকারি অফিসারের প্ররোচনায় এক দালালের হাতে বেধড়ক মার খেলেন খণ্ডঘোষ থানার জুবিলার বাসিন্দা এক বৃদ্ধ। এই ঘটনায় বুধবার দুপুরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বর্ধমান সাব রেজিস্ট্রী অফিসে। মার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় বংশীবদন ঘোষ নামে ওই বৃদ্ধ কে পরিবারের আত্মীয়রাই পাশেই রড ক্রস সোসাইটি তে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। জানা গেছে বংশীবদন বাবুর বুকে ও মুখে আঘাত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে বুধবার বংশীবদন বাবু তাঁর পাঁচ ভাইকে নিয়ে আসেন বর্ধমান আদালত চত্বরের উল্টোদিকে সাব রেজিস্ট্রী অফিসে। তিনি জানিয়েছেন, যাকে তিনি জমি বিক্রী করেছিলেন তাঁর নামে জমি রেজিস্ট্রী করে দিতেই বর্ধমানে এসেছিলেন। সাব রেজিস্ট্রী অফিসের নিয়ম মেনে সমস্ত কাজ করার পরে যখন রেজিস্ট্রী করার কাজ শুরু হয়, বংশীবদন বাবুর অভিযোগ, সেই সময়েই সাব রেজিস্ট্রী অফিসের এক আধিকারিক দিলীপ মন্ডল চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এসে তাঁকে দেখে বলতে থাকেন, ‘আপনিই তো কিছুদিন আগে এখান থেকে জাল দলিল করিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।’ অভিযোগ, বংশীবাবু কিছু বলার আগেই দিলীপবাবুর নির্দেশে অনুপ সরকার নামে এক আইনজীবির পরিচয় দেওয়া দালাল অফিসের মধ্যেই মারধর করতে থাকে তাঁকে। সরকারি অফিসের মধ্যেই এক বৃদ্ধকে এভাবে মারতে থাকলেও প্রথমে কেউ এগিয়ে আসেননি থামানোর জন্য। পরে উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে সেই অফিসের আর এক অফিসার এসে কোনভাবে আটকান অনুপ সরকার কে।

বংশীবদন ঘোষের ভাই অশোক ঘোষ বলেন, ‘সরকারি অফিসে কোন ব্যক্তি যদি ভুয়ো তথ্য দিয়ে দলিল করিয়ে থাকেন তার জন্য দায় কার? যে আধিকারিকরা এই তথ্য যাচাই করার কাজ করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আমার বড়দাকে কেন এভাবে সবার সামনে মারধর করা হলো? আমাদের তো কোন অপরাধ নেই। এখানে কারা কি করে তাও আমাদের জানা নেই। তাহলে না জেনেশুনে কেন এই অত্যাচার করা হলো? আবার নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চাইলেন।’ এদিকে মার খেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বংশীবদন ঘোষ ভেঙে পড়েন। রীতিমত কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘এই বয়সে এসে কোন অপরাধ না করে কেন মারা হলো আমাকে? বুকে, মুখে যেভাবে ঘুষি মেরেছে এখনও আমার যন্ত্রনা হচ্ছে। আমিতো কোন জাল নথি দিয়ে জমি রেজিস্ট্রী করিনি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই ঘটনার খবর পেয়ে উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের জানান, রেজিস্ট্রী অফিসের এক মহিলা কর্মী এসে দিলীপ মন্ডল কে বলেন, যে ব্যক্তি নকল তথ্য দিয়ে জাল দলিল করিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি এই ব্যক্তি নন। আর তারপরই ভুল বুঝতে পেরে অফিসের আধিকারিক উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় বংশীবদন ঘোষের কাছে ক্ষমা চান। ততক্ষণে অভিযুক্ত দিলীপ মন্ডল নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়েন। এরই ফাঁকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আইনজীবির পরিচয় দেওয়া দালাল অনুপ সরকার নামে সেই ব্যক্তি। ভরা রেজিস্ট্রী অফিসে এহেন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই তোলপাড় পড়ে যায়।

ডিএসআর ১(ডেপুটি সাব রেজিস্ট্রী অফিসার) উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি মাস দেড়েক এখানে এসেছি। সবাইকে চিনি না। আমার সামনেই অনুপ সরকার নামে ওই ব্যক্তি যখন বংশীবাবুকে ধাক্কা মারেন, আমি সঙ্গে সঙ্গেই ওনাকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নি ওই ব্যক্তির কাছে। আমার সামনে এই ঘটনা ঘটায় আমি আমার যা কর্তব্য তাই করেছি।” ডিএসআর ২ দিলীপ মন্ডলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার অফিসে কোন সমস্যা হয়নি। এটা ডিএসআর ১ অফিসের সমস্যা। ডিএসআর ১ সাহেবের মনে হয়েছে ওই ব্যক্তি, যিনি রেজিস্ট্রী করতে এসেছেন তিনি অন্য লোকের হয়ে প্রক্সি নিয়ে রেজিস্ট্রী করতে এসেছেন। সেই সময়ে একটা অশান্তি ঝামেলার পরিবেশ তৈরী হয়। তখন অনুপ সরকার নামে একজন আইনজীবি ওনাকে ধাক্কাধাক্কি করেন। আমি ঘরেই ছিলাম। আমার সঙ্গে কিছু হয়নি।’

যদিও ঘটনার সময় উপস্থিতিতে অন্যান্য উপভোক্তারা সকলেই জানিয়েছেন, দিলীপ মণ্ডলের ইন্ধনেই এই ঘটনা ঘটেছে। জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘কি সমস্যা হয়েছে সে বিষয়ে রিপোর্ট চাইব। সরকারি অফিসে কেন মারধর করার ঘটনা ঘটবে?’ বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে মৌখিকভাবে থানাকে বিষয়টি জানিয়েছেন নিগৃহীতর পরিবার। লিখিত অভিযোগ আসলে তদন্ত করে দেখা হবে।

আরো পড়ুন