বর্ধমানে বিদেশ ফেরত প্রায় ১৫জনের কোনো হদিশ নেই, উদ্বিগ্ন প্রশাসন

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিদেশ থেকে ফিরে আসা প্রায় ১৫জনের কোনো হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। রীতিমত উদ্বিগ্ন গোটা জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে জোরদার খোঁজখবর শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে তাদের খুঁজে বের করার জন্য মোবাইল ট্র্যাকিং করার প্রস্তুতিও – শনিবার এই তথ্য জানিয়েছেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। 
করোনা নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে আতংকের মাঝেই শনিবার বর্ধমান জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক সেরে গেলেন রাজ্য কৃষি বিপনন দপ্তরের সচীব এবং করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে বর্ধমান জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার সুনীল গুপ্তা। বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলার সমস্ত প্রশাসনিক আধিকারিক সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের ব্লক স্তরের আধিকারিকরাও। যদিও এদিন করোনা ভাইরাসের জেরে সাংবাদিকদের বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া না হলেও বৈঠকে উপস্থিত আধিকারিকদের সংখ্যাধিক্য নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। 
এদিন সুনীল গুপ্তা পুরোপুরি সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। পরে জেলাশাসক জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের পর জেলার প্রস্তুতি কি হয়েছে এদিন তাই তুলে ধরা হয়েছে সুনীল গুপ্তার সামনে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বাজারে পাওয়া না যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁরা নিজেরাই তৈরী করে নেবার কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ১৬০ লিটার স্যানিটাইজার তৈরী করা হয়েছে। এই স্যানিটাইজার তৈরী করছেন বর্ধমান ২ ব্লকের ৩টি ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। 
জেলাশাসক জানিয়েছেন, এদিন সুনীল গুপ্তা আরও বেশি স্ক্রিনিং ক্যাম্প করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় ইনফারেড থার্মোমিটার রয়েছে অনেক কম। এখনই তাঁদের ১০টি থার্মোমিটার প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে রয়েছে সাকুল্যে ৬টি। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ৭০টি এই থার্মোমিটার কেনার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৪০০টি আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় বেড তৈরীর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 
প্রসঙ্গত, জেলাশাসক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেলায় মোট ১১০০জনকে হোম করেনণ্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশীর সংখ্যা ১৫৮জন। তবে সবথেকে উদ্বেগের কারণ হল এই বিদেশীদের মধ্যে প্রায় ১৫জনের কোনো হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের খোঁজে ব্যাপক হারে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোন ট্যাকিং-এরও চেষ্টা চলছে। তিনি জানিয়েছেন, যাঁরা বাড়িতে স্বেচ্ছাবন্দি হিসাবে আছেন তাঁদের প্রতি কড়া নজরদারীর জন্য ক্লাব, সিভিক ভলেণ্টিয়ার, আশা কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পাশাপাশি এদিন থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরও যুক্ত করা হয়েছে। 
অপরদিকে, গরম পড়তে না পড়তেই জেলা জুড়ে রক্তের আকাল মেটাতে বিভিন্ন জায়গায় যে রক্তদান শিবিরগুলি অনুষ্ঠিত হয় সেগুলি চালু থাকবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে প্রত্যেকেই উপযুক্ত নিরাপত্তা নিয়েই কাজ করবেন। একইসঙ্গে ১০০ দিনের কাজকেও চালু রাখার নির্দেশ দিলেও সেখানে শ্রমিক নিয়োগ কম করার কথা বলা হয়েছে। 
জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর সহ বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে রোগীদের একসঙ্গে থাকার বিষয়টি তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নিয়ে যাঁরা আসছেন তাঁদের প্রথমেই আলাদা করে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে নিয়ে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি বর্ধমান শহরের ডাক্তারপাড়া বলে চিহ্নিত খোসবাগানের সমস্ত চিকিৎসকদের নিয়েও জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈঠক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 
অপরদিকে, এদিনই বর্ধমান শহরের সদরঘাট ছটপূজো ওয়েলফেয়ার সমিতি এবং লক্ষ্মীপুর মাঠের রাণা প্রতাপ ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে এলাকায় স্থানীয়ভাবে তৈরী করা হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করা এবং ওষুধ স্প্রে করা হয়। এই উদ্যোগে স্বভাবতই খুশি এলাকার বাসিন্দারা।

আরো পড়ুন