বর্ধমানে মিষ্টিহাবে না দাঁড়িয়েই বেরিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী, চরম হতাশায় গুটিকয় দোকানদার

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বেশ কয়েকবছর বন্ধ থাকার পর নানান টানাপোড়েন শেষে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে ফের এক এক করে খুলেছে বর্ধমানের মিষ্টিহাবের দোকান। খদ্দের নেই, জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাস দাঁড়াচ্ছে না, প্রতিদিন লোকসান সহ্য করে মাত্র পাঁচটি দোকান মালিক তবুও দোকান খুলছেন। আশা, যদি দিন বদলায়। এরই মধ্যে রবিবার সকাল থেকেই মিষ্টিহাবের গুটিকয় দোকান মালিক আশায় বুক বেঁধে ছিলেন এই ভেবে যে  তিনদিনের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলা সফরে যাবার পথে ২নং জাতীয় সড়কের ওপর মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের মিষ্টিহাবে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দাঁড়াবেন তিনি। কিন্তু মিষ্টি ব্যবসায়ীদের সেই আশা অন্তত এই ক্ষেপে পূরণ হল না। 

বিজ্ঞাপন
বিকেল পাঁচটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ২নং জাতীয় সড়ক ধরে মিষ্টিহাব কে পাশে রেখেই দুরন্ত গতিতে বেরিয়ে যায় দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে। যদিও মিষ্টি হাবের দু একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মিষ্টিহাব পার করার সময় তাদের দিকে হাত দেখিয়ে গেছেন। জানা গেছে দুর্গাপুর সার্কিট হাউসে রবিবার রাত্রি যাপনের পর সোমবার মুখ্যমন্ত্রী রওনা দেবেন পুরুলিয়ার উদ্দ্যেশ্যে। প্রসঙ্গত কয়েকমাস আগেই নবান্ন থেকে ভার্চুয়াল বৈঠকে পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসকের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, ‘ বর্ধমানের মিষ্টিহাব কেমন চলছে।’ আর তারপরই মিষ্টি হাব কে পুনরায় চালু করার ব্যাপারে উঠেপড়ে লাগে জেলা প্রশাসন। মিষ্টি হাবের দোকানদার থেকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে মিষ্টি হাব দ্রুত খোলার ব্যাপারে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সংগঠিত করেন জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা। 
বৈঠকে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মিষ্টি হাবের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রমোদ কুমার সিং সেই সময় জানিয়েছিলেন, ‘সরকারি বাস দাঁড়ালে মিষ্টিহাবে এবার ব্যবসা করা যাবে।’ তিনি এও জানিয়েছিলেন, ‘এর আগে তাঁদের কেবলই লোকসানের মুখে দেখতে হয়েছিল এখানে ব্যবসা চালিয়ে। তার মূল কারণ ছিল খরিদ্দারের অভাব। কিন্তু পরবর্তীকালে ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে জেলাপ্রশাসন কে জানায়, তাঁরা এখনি দোকান খুলতে চায় না।’ আর এরপরই মিষ্টি হাব নতুন করে খোলার ব্যাপারে ফের অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়। যদিও জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও জেলাশাসক নির্দেশ দেন মিষ্টি হাব যাঁরা নির্দিষ্ট দিনে খুলবেন না তাদের দোকান ফেরত নিয়ে নেওয়া হবে। পরিবর্তে সেইসব দোকান স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর কেউ নিতে চাইলে তাদের দিয়ে দেওয়া হবে। এরপরেও বেশ কিছু দোকানদার মিষ্টি হাবে দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। 
এমনি এক মিষ্টি ব্যবসায়ী সনৎ কুমার রক্ষিত বলেন, ” প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে জানানো হয়েছিল সরকারি সব বাস এই মিস্টিহাবে স্টপেজ দেবে। আমরাও আশাবাদী ছিলাম এবার এখানে দোকান চালিয়ে দুটো টাকা লাভের মুখ দেখার। কিন্তু কোনো বাস কেন, দু চার গাড়িও এখানে দাঁড়িয়ে মিষ্টি কিনতে আসে না। সারাদিনে বরাত জোরে দু থেকে তিনজন খদ্দের আসেন এই মিষ্টি হাবে। তাও তারা স্থানীয় এলাকার। দোকান খুললেই প্রতিদিন তিনশো থেকে পাঁচশো টাকা খরচ আছে। সেখানে এখন কোনোদিন ১০০টাকার তো কোনোদিন ২০০টাকার বিক্রি হচ্ছে। এইভাবে কতদিন ব্যবসা চালানো যাবে তাই নিয়ে চরম সংকটে রয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম আজ মুখ্যমন্ত্রী এই রাস্তা দিয়ে যাবার পথে একবার এখানে দাঁড়াবেন, কিন্তু উনি ব্যস্ত মানুষ। যদি এরপরে আবার সুযোগ পাই আমাদের সমস্যার কথা ওনাকে জানাবো।” 
আরেক মিষ্টি ব্যবসায়ী সোমনাথ ভট্টাচার্য্য বলেন, ” প্রশাসনের দেওয়া শর্ত মেনেই এবার ফের ব্যবসা শুরু করার মনস্থির করেছিলাম। আশা করেছিলাম সরকারি বাসগুলো যদি সরাসরি মিষ্টিহাবে এসে স্টপেজ দেয়, তাহলে ভাল ব্যবসা হবে। বাস তো দাঁড়াচ্ছেই না, অন্যান্য গাড়ি বা দুচাকা নিয়ে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষও মিষ্টি হবে আসছেন না। মিষ্টি হবার মেন গেটের সামনে যারা দোকান নিয়ে রেখে দিয়েছেন তাঁরা ভাবছেন, আমরা যারা দু পাঁচজন দোকান খুলেছি, তাদের ব্যবসা যদি চলে তবেই তারা দোকান খোলার রিস্ক নেবেন। ফলে পথচলতি অনেকেই বুঝতেই পারছেন না আদৌ মিষ্টি হাব খোলা আছে নাকি বন্ধ। প্রশাসনের অবিলম্বে এই সমস্ত দোকানদারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। এর ফলে আমরা যারা দোকান খুলে রেখেছি তারা কার্যত ঘোর সংকটে পড়েছি।”

আরো পড়ুন