বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ সেলের সামনেই রোগীর আত্মহত্যা, ফের প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি রোগী নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই গভীর রাতে গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে রেলিংয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করল। আর এই ঘটনায় মঙ্গলবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা হাসপাতাল জুড়ে। খোদ সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভিতর পুলিশ সেলের সামনে রোগীর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় হসপিটালের নিরাপত্তার বেহাল ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে পাঁচ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার রহস্যজনক ভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে রোগীর পরিবারের লোকেদের মধ্যে। উল্লেখ্য চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গলসি বড়মুড়িয়া গ্রামের সন্ধ্যা মন্ডল নামে এক বৃদ্ধা রোগী রাধারাণী ওয়ার্ডের ৬নং ব্লকে মশারির ভিতর বিছানায় শুয়েই আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। সেই ঘটনাও ঘটেছিল গভীর রাতে।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ উঠেছিল আগুন লাগার ঘটনা নিরাপত্তারক্ষী থেকে কর্তব্যরত নার্স, আয়া ও ডাক্তার কেউই টের পায়নি। যখন আগুন লাগার বিষয় জানতে পারে তখন সব শেষ হয়ে যায়। এবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি রোগী দোতলা থেকে নিচে নেমে পুলিশ সেলের সামনেই গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে রেলিংয়ে ঝুলে পড়ল, অভিযোগ, এক্ষেত্রেও কেউই দেখতে পেল না। মৃত রোগীর স্ত্রীর অভিযোগ, “গেটের সামনে দুজন নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তারা ঘুমোচ্ছিলেন। আর সেই কারণেই এতবড় ক্ষতি হয়ে গেল তাঁর। তারা জেগে থাকলে এই ঘটনা ঘটতো না” তবে নিরাপত্তারক্ষীরা হাসপাতালের নাকি পুলিশের ছিল সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে জানাতে পারেননি মৃতের স্ত্রী মিঠু বাগ। মৃত রোগীর নাম নয়ন বাগ, বয়স ৪৪। বাড়ি হুগলীর গোঘাটে। 

এদিকে মৃতের স্ত্রী মিঠু বাগ এদিন সংবাদ মাধ্যম কে জানিয়েছেন, প্রায় দেড় বছর আগে তার স্বামীর গলব্লাডারের অপারেশন হয়েছিল। সোমবার পেটের যন্ত্রণা বাড়ায় প্রথমে বাঁকুড়ার কোতলপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেইমত হসপিটালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কে দেখানোর পর দোতলায় ভর্তি করা হয়। এদিন রাতে তার স্বামী দীর্ঘক্ষণ যন্ত্রণায় ছটপট করলে তা কমানোর জন্য চিকিৎসকদের বারবার বলা সত্বেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে তার অভিযোগ। যন্ত্রনা থেকে বাঁচতেই তার স্বামী বাথরুম যাওয়ার নাম করে নিচে নেমে আসেন। তিনিও সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলেও প্রথমে তাকে দেখতে পাননি। তিনি আবার উপরে উঠে যান। আর এরই মধ্যে কেউ একজন তাকে জানায় নিচে করিডোরে আপনার রোগীকে দেখা গেছে। তিনি নিচে নেমে এসে দেখতে পান গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে জরুরি বিভাগের করিডোরে ঝুলছে তার স্বামী। 

মৃতের স্ত্রী তার স্বামীর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করার পাশাপাশি হাসপাতালের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে কিভাবে রোগী নিচে নামলো, এমনকি পুলিশ সেলের সামনে করিডোরে গলায় গামছা জড়িয়ে ঝুলে পড়ল – প্রশ্ন তুলেছেন তা নিয়েও। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন,” একজন রোগী আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পেয়েছি। জরুরি বিভাগের পাশে যে জায়গায় মর্গ আছে সেখানেই এই ঘটনাটি ঘটেছে। এই জায়গায় যেহেতু সচারাচর কেউ যাতায়াত করে না তাই ওই রোগী আত্মহত্যার জন্য বেছে নিয়েছেন সেই জায়গাটি। আমরা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ওই জায়গার কোনো সি সি ক্যামেরার ফুটেজ আছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। চিকিৎসা ও নজরদারিতে গাফিলতি ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।”

আরো পড়ুন