মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর ২০মে খুলছে মিষ্টি হাব, বর্ধমানে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই ফের একবার বর্ধমানের বামচাঁদাইপুর এলাকায় মিষ্টি হাব চালু করার ব্যাপারে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হল। শুক্রবার জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক, জেলা পরিবহন আধিকারিক, পুলিশ সুপার, বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক সহ বিভিন্ন মিষ্টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়। কি কি কারণে এতদিন মিষ্টি হাব বন্ধ হয়ে রয়েছে। সমস্যা মেটাতে কি কি পদক্ষেপ প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে সব পক্ষকে নিয়ে এদিন বৈঠকে আলোচনা হয়। এদিনের বৈঠকে সিধান্ত নেওয়া হয়েছে চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকেই খোলা হবে মিস্টি হাব।

বিজ্ঞাপন

জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘২০ তারিখ থেকেই মিষ্টিহাব পুরোপুরিভাবে চালু হয়ে যাবে। এখন থেকে সমস্ত সরকারি বাস মিস্টি হাবে দাঁড়াবে। কলকাতা থেকে আসা বাস গুলির প্রথম স্টপেজ হবে মিস্টি হাব। একইভাবে আসানসোল বা অন্যরুট থেকে আসা সরকারি বাসগুলোও দাড়াবে এখানেই। পরিবহন দপ্তরের পক্ষ থেকেও বিষয়টি এসবিএসটিসির কাছে জানিয়ে দেওয়া হবে। বেসরকারি বাস গুলিকেও মিষ্টি হাবে স্টপেজ দেওয়ার অনুরোধ করা হবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ৩০ জুন অবধি আমরা দেখব। এরপরেও কোন ব্যবসায়ী যদি দোকান না খোলেন তাহলে তার লিজ আমরা বাতিল করে অন্য কাউকে দিয়ে দেব।’

প্রসঙ্গত ২০১৭সালের এপ্রিল মাসে মুখ্যমন্ত্রী এই মিষ্টিহাবের উদ্বোধন করেছিলেন আসানসোল থেকে। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মিষ্টি হাব তৈরি করা হয়েছিল। দোতলা এই ভবনে মোট ২৫ টি স্টল রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর আগে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে এই মিষ্টি হাব কে চালু করার। কিন্তু শুধু ক্রেতা না থাকার কারণে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বন্ধ করে দেন তাদের দোকান। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য ছিল, জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী সরকারি ও বেসরকারি বাস এখানে নিয়মিত স্টপেজ না দিলে এই এলাকায় ব্যবসা চালানো অসুবিধার। এদিন মিষ্টি হাব কে ফের সচল করার বিষয়ে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে সরকারি বাসের স্থায়ী স্টপেজ করার বিষয়ে উদ্যোগী হন জেলাশাসক।

বর্ধমান সীতাভোগ-মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোশিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ কুমার সিং বলেন, ‘আমরা দোকান খুলতে অভ্যস্ত। দোকান বন্ধ করার অভ্যাস আমাদের নেই। তারপরেও দিনের পর দিন ক্রেতা না থাকায় বহু লোকসান সহ্য করে ব্যবসা চালানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এইভাবে দেশিদিন টানা সম্ভব হয়নি। এদিনের বৈঠকে প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন কলকাতা থেকে আসার পথে সরকারি সমস্ত বাস মিষ্টি হাবে দাঁড়াবে। একইভাবে আসানসোল থেকেও কলকাতা যাবার সময় বাসগুলো এখানে দাঁড়াবে। ফলে আমরাও আশাবাদি ক্রেতার সমস্যা মিটবে। ব্যবসাও ভালো হবে।’ 

এলাকার বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক বলেন, 
‘এতদিন বাস না দাঁড়ানোর জন্য মিষ্টি হাবে কোন কাস্টমার হচ্ছিল না। ফলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দিতে একপ্রকার বাধ্যই হয়েছিলেন। এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবার থেকে সমস্ত সরকারি বাস এখানে দাঁড়াবে। ফলে ক্রেতার সমস্যা মিটবে। ২০ তারিখ থেকেই চালু হয়ে যাবে মিষ্টি হাব। এটি  মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। আমরাও এটি যাতে চালু হয় তারজন্য যথাসাধ্য সহযোগিতায় করব।’

অন্যদিকে কলকাতা থেকে আসানসোল যাবার পথে ২নং জাতীয় সড়কে আমড়া এলাকার মা মনসা ল্যাংচা ভান্ডারের কর্ণধার সৌমেন সাহা বলেন,” কলকাতা থেকে আসানসোল মুখী বাস সরাসরি যদি শক্তিগড়ে না দাঁড়িয়ে বামচাঁদাইপুরে মিষ্টি হাবে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে শক্তিগড়, আমড়া, প্যামরা এলাকায় দীর্ঘদিনের ল্যাংচা ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে এই পদ্ধতিতে মিষ্টি হাবের ব্যবসায়ীরাও লাভবান হতে পারবেন না। বর্তমানে দূরপাল্লার বাস শক্তিগড় এলাকার প্রায় ৪৩ – ৪৪টি ল্যাংচা ও মিষ্টির দোকানের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের রিফ্রেশমেন্ট ও ভোজন রসনার সুযোগ করে দেয়। মিষ্টি হাবের এক তলায় ১৩টি ও দোতলায় ১২টি স্টল রয়েছে। একসঙ্গে একাধিক বাস এসে দাঁড়ালে যাত্রীরা কোন দোকান কে বেছে নেবেন তা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।”

 শক্তিগড় ল্যাংচা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মন্ডল বলেন,” মিষ্টি হাব চালু করা সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসনের বিষয়। এব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে এর আগেও একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছিল, বিভিন্ন কারণে মিষ্টি হাবের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা চালাতে পারেননি। এর আগেও বলা হয়েছিল মিষ্টি হাবে সরকারি বাস দাঁড়াবে। দাঁড়াতেই পারে। ২নং জাতীয় সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সাত টি ডিপোর বাস যাতায়াত করে। প্রতি ৭মিনিট অন্তর একটি করে বাস শক্তিগড় এলাকার ল্যাংচা দোকানগুলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। দশ থেকে পনেরো মিনিট বাসগুলো দাঁড়িয়ে ফের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলে যায়। এদের মধ্যে যদি শুধু তিনটি ডিপোর বাস কে মিষ্টি হাবে দাঁড় করাবে মনে করে প্রশাসন সেক্ষেত্রেও জায়গাই তো নেই। এছাড়াও পরিকাঠামোগত ত্রুটিও মিষ্টি হাবে ব্যবসা চালিয়ে যাবার পক্ষে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের সব দিক খতিয়ে দেখা উচিত।”

আরো পড়ুন