রক্তে টান, মেটাতে তৎপরতা শুরু বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সেচ্ছাসেবী সংস্থার

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: গ্রীষ্মের তীব্রতা আর এরই মাঝে টানা একমাস রমজান থাকায় জেলার ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলিতে রক্তের ঘাটতি কার্যত প্রকট হয়েছে। চাহিদার তুলনায় রক্তের যোগান দিতে হিমশিম অবস্থা সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকগুলোর। বুধবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে সমস্ত নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের (হোল ব্লাড) যোগান ছিল প্রায় শূন্য। এমনকি রেড ব্লাড সেল রক্তের প্রায় সব গ্রুপের নেগেটিভ মজুদ রক্তের সংখ্যাও ছিল নগন্য। রোগীর রক্তের প্রয়োজনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়েও অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন না রক্ত বলেও বুধবার একাধিক রোগীর পরিবারের আত্মীয়রা অভিযোগ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

 যদিও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট তাপস কুমার ঘোষ বলেন,” রক্তের সংকট নেই, তবে দৈনন্দিন চাহিদার তুলনায় কিছু ঘাটতি থাকছে। আমরা সেই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থাকে ছোট ছোট ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প করার আবেদন জানিয়েছি। বর্ধমান হাসপাতালের উপর শুধু আমাদের জেলাই নয়, বীরভূম, বাঁকুড়া, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান সহ ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রোগীরাও চিকিৎসার জন্য নির্ভর করেন। ফলে প্রতিদিন রক্তের একটা চাপ থাকেই। এছাড়াও প্রসূতি, শিশু এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ইউনিট রক্ত প্রতিদিন প্রয়োজন হয়। এই সময়ে প্রতিবছর কিছুটা রক্তের টান তৈরি হয়। “

বর্ধমান হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ স্বপন বণিক বলেন,” প্রতিবছর গ্রীষ্মের শুরুর এই সময়ে রক্তের কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। সব গ্রুপের রক্তের টান না থাকলেও কয়েকটি গ্রুপের রক্তের মজুদ কমে আসে। আমরা বিভিন্ন ভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করি। যাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসা মানুষের রক্তের সমস্যা না হয়। পাশপাশি প্রসূতি ও শিশু বিভাগে প্রতিদিন যে রক্তের প্রয়োজন থাকে তার সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে ব্যাপারেও সজাগ থাকি। এরই পাশপাশি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের অনেকের প্রতিদিন রক্তের প্রয়োজন থাকে, সেই বিষয়েও আমদের লক্ষ্য রাখতে হয়। এই বিভাগ গুলোকে প্রথমে গুরুত্ব দিয়ে তারপর বাকি রোগীদের রক্তের ব্যবস্থা করা হয়। এই মুহূর্তে বর্ধমান হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক এ-পজেটিভ রক্তের সংকট রয়েছে। বাকি নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত কিছুটা স্বাভাবিকের থেকে কম মজুদ আছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

বর্ধমান ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্ণধার সমাজসেবী মহম্মদ আসরাফউদ্দিন (বাবু) বলেন,” গত দু মাসে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের সংখ্যা কমে গেছে। একদিকে রমজান মাস অন্যদিকে তীব্র গরমের কারণে নির্দিষ্ট ক্যাম্পগুলো পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে চলতি মাসেই ৬টি ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প করা হচ্ছে। আগামী ১৪,১৫,২১,২২ ও ২৯মে যথাক্রমে আউশগ্রাম,মেমরি, আদ্রাহাটি, গলসি ও শ্যামসুন্দরে এই ক্যাম্প গুলোর আয়োজন করা হবে। যেখান থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হসপিটাল এর ব্লাড ব্যাংকে ২৫০ইউনিট রক্ত দেওয়া হবে। রশ্মি ব্লাড ব্যাংক কে ১০০ইউনিট এবং বামচাঁদাইপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে ৫০ইউনিট রক্ত দেওয়া হবে।” 

আসরাফউদ্দিন বলেন,” সারা বছরই প্রতি মাসে বর্ধমান হসপিটালের ব্লাড ব্যাংকে গড়ে প্রায় ২০০ইউনিট রক্ত সোসাইটির পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রতি শনি ও রবিবার ছোট ছোট ক্যাম্প জেলার বিভিন্ন প্রান্তে করা হয়। ২০১০ সাল থেকে বর্ধমান ওয়েলফেয়ার সোসাইটি সেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে আসছে। ২০২০ সালের মধ্যে ১০হাজার ইউনিট রক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক গুলোতে যোগান দিয়েছি। আমি নিজেও ইতিমধ্যে ১০০বার রক্ত দিয়েছি। তিনি বলেন, বছরের অন্য সময়ে রক্তের সমস্যা দেখা দেয় না। তবে গরমের শুরুর সময়টায় প্রতিবছর কিছুটা রক্তের সমস্যা থাকে। কয়েকদিনের মধ্যেই এই সমস্যা আর থাকবে না।” 

অন্যদিকে বর্ধমান হসপিটালের ব্লাড ব্যাংকের মেডিকেল ইনচার্জ স্বপন বণিক বলেন,” হসপিটালে রক্তের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন কে যেমন এগিয়ে আসার আবেদন জানানো হয়েছে, পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন থানা গুলোকেও ক্যাম্প করার আবেদন জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই মন্তেশর, গলসি থানা নিজেদের উদ্যোগে রক্তদান শিবির করেছে। আগামী দু একদিনের মধ্যেই বর্ধমান থানা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবে বলে আমাদের জানিয়েছে। ফলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রক্তের যেটুকু ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা মিটে যাবে বলেই আশা করা যাচ্ছে।”

আরো পড়ুন