সাধারণের রাস্তা চলে গিয়েছে বালি কারবারিদের দখলে, বেহাল রাস্তা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের, বর্ধমানে ফের ভোট বয়কটের হুমকি!

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, খণ্ডঘোষ: মাস তিনেক আগেই বেহাল রাস্তার মেরামত ও বালির গাড়ির যাতায়াত বন্ধ করতে গ্রামবাসীরা রাস্তা কেটে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। কয়েকদিন বড় গাড়ি যাতায়াত বন্ধ থাকার পর ফের দেদার চলছে বালি,ইট,মাটি,পাথর বোঝাই গাড়ি। পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ থানার পোলেমপুর থেকে কামালপুর, খালপাড়া, গৈতানপুর, শালুন হয়ে নবগ্রাম পর্যন্ত দামোদরের নদের ধার বরাবর প্রায় ২১কিলোমিটার রাস্তা এখন কার্যত সাধারণ মানুষের কাছে বিভীষিকা। সামনেই বর্ষা। আর তাই এই এলাকার কয়েক হাজার বসবাসকারী মানুষের আশঙ্কা রাস্তার যা অবস্থা তাতে এই এলাকার মানুষের ঘর থেকে বেরিয়ে কোথাও যাতায়াত করাই এবার বন্ধ হয়ে যাবে। 

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সারাবছরই এই রাস্তা বালি কারবারিদের দখলে থাকে। প্রতিদিন কয়েকশ বালির গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ফলে রাস্তা টি কিসের তৈরি তা আর বোঝাই যায় না। বালির পুরু আস্তরণে ঢেকে গেছে পোলেমপুর থেকে নবগ্রাম পর্যন্ত এই পিচের রাস্তা। গোটা রাস্তা জুড়েই ছোট বড় খানা খন্দে ভর্তি। প্রায়ই বালিতে ঢেকে যাওয়া গর্ত বুঝতে না পেরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন যাতায়াতকারীরা। যদিও একসময় এই রাস্তা পিচ দিয়েই তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু গত ১৫বছরে বাম, ডান কোনো সরকারই এই রাস্তার হল ফেরানোর কোনো চেষ্টা করেনি বলেই স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয় মানুষদের অসুবিধার কথা কোনো পক্ষই ভাবেনি বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে একাধিক গ্রামের বসবাসকারীরা।

যদিও প্রত্যেক পঞ্চায়েত ভোটের আগে শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা রাস্তা ঠিক করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিতে এলাকায় গিয়ে প্রচার করে। ভোট মিটে গেলে আর কারুর দেখা পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই রাস্তার দাবিকে সামনে রেখেই ভোট বয়কটেরও ডাক দিয়েছিলেন বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। এরপর রাস্তাটি মেরামতের জন্য আশ্বাস দেওয়া ও উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। মোট ২১ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে ২১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হলেও সেই কাজ প্রশাসনিক জটিলতায় এখনো শুরুই হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। 

জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধারা বলেন, ‘রাস্তাটি বাংলা সড়ক যোজনার তৃতীয় পর্যায়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললে খুব শীঘ্রই রাস্তাটি কাজ শুরু করা হবে।’ এদিকে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের পরিমান যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে এখন প্রশাসনের আশ্বাসে আদৌ কতটা চিঁড়ে ভেজে তা সময়ই বলবে বলে জানিয়েছেন কামালপুরের বাসিন্দারাই। ভুক্তভুগী স্থানীয় বহু বাসিন্দা জানিয়েছেন, সামনের পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই রাস্তার কাজ না হলে এই রাস্তা দিয়ে সমস্ত গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনকি ফের ভোট বয়কটের হুমকি দিয়ে রেখেছেন তারা। 

গ্রামবাসী মীর আবুল হোসেন জানিয়েছেন, তাঁরা বারবার আন্দোলন করেছেন কিন্তু লাভ হয়নি। ভোটের সময় সবাই আসে, প্রতিশ্রুতিও দেয়। কিন্তু ভোট পেরলেই সব ফাঁকা। যা ছিল তাই থেকে যায়। স্থানীয় এ্যাম্বুলেন্স চালক লাল্টু মল্লিক জানিয়েছেন, রাস্তার যা অবস্থা তাতে দিনে রাতে রীতিমত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাঁদের রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এই এলাকার পড়ুয়া উনমিনা খাতুন, নাসেম মল্লিকরা জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিনই স্কুল যেতে হয় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। বর্ষাকালে এই রাস্তায় চলাই দায়। জল কাদায় রাস্তার খানা খন্দ পেরিয়ে তাদের স্কুল যাওয়া সম্ভব হয় না। 

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, রাস্তার এই খারাপ অবস্থার জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় মারাও গেছেন স্থানীয় বাসিন্দা। কিন্তু তাতেও কোনো হেলদোল ঘটেনি প্রশাসনের। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, দামোদর থেকে প্রতিদিন শয়ে শয়ে ওভারলোড বালির গাড়ি যাতায়াত করার জন্যই এই রাস্তার হাল খারাপ হয়েছে। এব্যাপারে বালির ঘাট মালিকদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরং এই এলাকার বালি কারবারিদের একাংশের নিজেদের মধ্যে সংঘাতের কারণে কেউই রাস্তার সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছে না। আর প্রশাসনও সব জেনেও চোখ বন্ধ করে রেখেছে।

কামালপুর এলাকার এক বালি কারবারি জানিয়েছেন, মাস তিনেক আগে গ্রামের রাস্তা কেটে দেওয়ার পর গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে নিজের খরচায় কয়েক কিলোমিটার রাস্তা কংক্রিটের করে দেওয়ার কথা তিনি বলেছিলেন। সেক্ষেত্রে প্রায় দশ লক্ষ টাকা খরচ হতো। কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবি ছিল পিচের রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার। তিনি জানিয়েছেন, পিচের রাস্তা কেবল প্রশাসনই করতে পারে। পরে গ্রামবাসীরা বালির গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। 

এদিকে প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এই রাস্তা প্রথমে জেলা পরিষদের অধীনে থাকলেও পরে পিডব্লিউডি কে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই রাস্তা স্টেট রুরাল ডেভলপমেন্ট এজেন্সির বাংলা সড়ক যোজনার অধীনে রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার বেহাল অবস্থার হাল আদৌ কে ধরবে, কবে ধরবে, আদৌ গ্রামবাসীদের কোনো সুরাহা হবে কিনা – এই সব প্রশ্নই রাতের ঘুম কাড়ছে পোলেমপুর, কামালপুর, খালপাড়া, গৈতানপুর, শালুন সহ একাধিক গ্রামের মানুষের।

আরো পড়ুন