খাতার পাতা, পেনের কালি শেষ, বন্ধ জেরক্স দোকান – টানা বন্ধে সমস্যায় পড়ুয়ারা

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: মাঝরাতে কেন্দ্রীয় সরকারের শপ’স এণ্ড এস্টাবলিষ্টমেণ্ট অ্যাক্টের অধীনে শর্ত মেনে কিছু দোকানপত্র খোলার ছাড়পত্র দেওয়াকে ঘিরে এবার বিভ্রান্তি দেখা দিতে শুরু করল জেলায় জেলায়। এখনও রাজ্য সরকার অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া অন্য কোনো দোকান খোলার অনুমতি দেয়নি। চলছে লকডাউন।
কিন্তু তারই মাঝে শুত্রুবার গভীর রাতে কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের শিথিলতা ঘটিয়ে পুরসভার জনবসতি এলাকার কিছু দোকান যাঁরা এই আইনে রেজিষ্টার্ড তাঁদের ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণজনিত সবরকমের নিয়ম মেনে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এখনও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এরকম কোনো নির্দেশ না আসায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। শুরু হয়েছে
বিতর্কও।
এদিকে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। এদিনই বর্ধমান পুর এলাকায় থাকা বড়বাজারের বেশ কিছু কাপড়ের দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে। এতে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। যদিও প্রশাসনিকভাবে এখনই এই সমস্ত দোকান খোলার বিষয়ে কেনো অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই লকডাউনের জেরে ঘরবন্দি বিশেষ করে পড়ুয়াদের বই ও খাতাপত্রে এবার সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। সমস্ত বইয়ের দোকান বা খাতাপত্রের দোকান অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের বাইরে থাকায় সেগুলিও বন্ধ। অন্যদিকে, ঘরে বসে পড়াশোনা চালাতে গিয়ে বহু ছাত্রছাত্রীদেরই খাতা, কলমের কালি শেষ। দোকান খোলা না থাকায় তাঁরা অনেকেই তা সংগ্রহ করতে পারছেন না।
ইতিমধ্যেই অভিভাবকদের পক্ষ থেকে এব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে। তাঁরাও চাইছেন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে বই ও খাতাপত্রের দোকানগুলিকে নিয়মের বাঁধনে বেঁধে খুলে দেওয়া হোক। তাতে ছাত্রছাত্রীদের এই সমস্যা মিটবে। না হলে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা ক্রমশই বাড়ছে।
বস্তুত, বহু অভিভাবকই জানিয়েছেন, এখন সবাই চাল, ডাল দিতেই ব্যস্ত। পড়ুয়াদের কথা এখনও পর্যন্ত কেউই ভাবেননি। যাঁরা এই সমস্ত সাহায্য দিচ্ছেন তাঁরা এরই পাশাপাশি পড়ুয়াদের কথা চিন্তা করে বাড়ি বাড়ি খাতাপত্র, পেন সরবরাহ করলে তাদের সত্যিই উপকার হত। বর্ধমানের কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনারও স্বীকার করেছেন, এই সমস্যার কথা। তিনি জানিয়েছেন, লকডাউনের আগেই যেহেতু ক্লাসে ওঠার বিষয় ছিল সেই সময়ই বিভিন্ন ক্লাসের ছেলেমেয়েদের তাঁরা খাতা সরবরাহ করেছিলেন।
যেমন অষ্টম শ্রেণীর প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে ৩টি করে খাতা দেওয়া হয়েছিল এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মাথা পিছু ৪টি করে খাতা দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে প্রায় জেলার সমস্ত স্কুল থেকেই এভাবে ছাত্রছাত্রীদের খাতাপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত একমাস ধরে লকডাউন পর্ব চলায় এবং কার্যতই ছেলেমেয়েরা বাড়ির মধ্যেই থাকায় আস্তে আস্তে তাদের খাতা এবং পেনের কালিও শেষ হয়ে আসতে শুরু করেছে। ফলে পড়া গেলেও লেখার ক্ষেত্রে তারা সমস‌্যায় পড়তে শুরু করেছেন। সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, অবশ‌্যই এটা একটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে চলেছে। লকডাউন আরও বেশিদিন চললে ছাত্রছাত্রীদের খাতা, বই, পেন-পেন্সিল নিয়ে সমস্যা বাড়বেই।
তিনি এও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই কিছু কিছু ছাত্রছাত্রী তাঁকে ফোন করে এই সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। তবে সেই সংখ্যাটা খুব বেশি না হলেও আগামী দিনে এভাবেই চলতে থাকলে সমস্যা আরও বাড়বে।
সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, সরকারের উচিত এব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্তত সপ্তাহে একটা দিনও যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই দোকানগুলিকে খুলে রাখার ব্যবস্থা করা হয় তাহলেও সমস্যা অনেকটাই মিটতে পারে। উল্লেখ্য, পাড়ায় পাড়ায় যে সমস্ত স্ট্যাশনারী বা মুদি দোকানগুলি রয়েছে সেখানেও পেন বা খাতা বিক্রি হয়। কিন্তু তাঁরাও জানাচ্ছেন, খাতাপত্র বা পেনের সরবরাহ নেই। বন্ধ রয়েছে। ফলে তাঁরা মাল পাচ্ছেন না, খরিদ্দার এসে ঘুরে যাচ্ছে।
বর্ধমান শহরের বায়োলজির শিক্ষক প্রীতম সাঁই জানিয়েছেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে পড়াশোনা সবই দৃশ্য মাধ্যমে হলেও বাস্তবিক ছাত্রছাত্রীদের হাতে লিখেই খাতায় কলমে তার প্রমাণ দিতে হয়। কিন্তু চলতি সময়ে ছাত্রছাত্রীরা এই খাতাপত্র না পাওয়ায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

আরো পড়ুন