সবাই ভাবছে বড়দের কথা, শিশুরা বন্দি জানালার ফ্রেমে

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: লকডাউন চলছে। চলছে তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধারণ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেবার মরিয়া প্রচেষ্টাও। কোনো মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে সেজন্য খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন দলের নেতাদের। রেশনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে চালও। কার্যত না খেতে পেয়ে মরার মত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এখনও পূর্ব বর্ধমান জেলার কোনো প্রান্তেই। কিন্তু খোদ সরকারী যে নির্দেশ – করোনা সংক্রমণে সব থেকে আক্রান্ত হতে পারেন বয়স্ক ও শিশুরা – সেই শিশুদের কথা কেউ ভেবেছে কি? 
কার্যত প্রচারের আলোয় না থাকা বর্ধমান শহর লাগোয়া নান্দুড় গ্রামের দেবু স্মৃতি সংঘ কিন্তু ভেবেছে এই শিশুদেরই কথা। তাঁরা ভাবেন নি বড়দের কথা। কারণ বড়দের কথা সবাই ভাবছেন। কিন্তু ভাবছেন না ঘরবন্দি হয়ে প্রায় দু মাস কেটে যাওয়া শিশুদের কথা। বাড়ির বাইরে বের হলেই আছে বকাবকি। নিরুপায় শিশুর শৈশব এখন জানালার ফ্রেমে বন্দি। আর সেই শিশুদের শর্তবিধি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে বাড়ির বাইরে দুদণ্ড আনা যায় সেই চিন্তাই ছিল এই সংঘের। 
সংঘের সভাপতি অনুপম ঘোষ জানিয়েছেন, প্রতিবছর তাঁরা ২৫ শে বৈশাখ রবিঠাকুরের জন্মদিন পালন করেন বেশ ঘটা করেই। এলাকার ছেলেমেয়েদের সকলকে তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। কিন্তু চলতি করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তা এবার সম্ভব হয়নি। আর তাই ক্লাবের সদস্যরা নিজেদের মধ্যেই আলোচনা চালাচ্ছিলেন কিভাবে শিশুদের কষ্ট লাঘব করা যায়, কিভাবে দেওয়া যায় তাদেরকে আনন্দ। গত কয়েকদিন ধরেই তাঁরা প্রতিদিন বিকাল ৪টে থেকে ৬ টা পর্যন্ত গ্রামের শিশুদের বাড়ির বাইরে বার করে আনছেন। গ্রামের মাঠে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। 
এরপর তাদের হাতে খাতা, পেন্সিল, পেনের পাশাপাশি বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন রকম টিফিন তুলে দেওয়া হচ্ছে। কোনোদিন কলা, ডিম সেদ্ধ, কোনোদিন কেক, কোনোদিন চকোলেট। অনুপম বাবু জানিয়েছেন, ১৬০জন শিশুকে দিয়ে তাঁরা শুরু করেছিলেন। আর এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫০-এ। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ঘরের মধ্যে আটকে থাকা শিশুরা তাও কিছুক্ষণের জন্য খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতে পারছে। বন্ধু বান্ধবদের দেখতে পাচ্ছে। কথা বলতে পারছে। আর এতেই অনেকটা মনমড়া ভাব কেটে গেছে শিশুদের। রবিবার বিকালে এই কর্মকাণ্ড দেখে যান বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিক। তিনিও জানিয়েছেন, সত্যিই চোখ খুলে দিয়েছে এই ক্লাব। তাঁরা বড়দের কথাই ভাবছিলেন। শিশুমনের দিকটা ব্রাত্যই ছিল। এঁরা সেটাই করে দেখাচ্ছে। আর এই অভিনব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিধায়কের পাশাপাশি এলাকার বসবাসকারীরা।

আরো পড়ুন